বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দর কষাকষির পর বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে। আর পাকিস্তানের শুল্ক নেমেছে ১৯ শতাংশে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। সেই হিসেবে ভারতের তুলনায় কম শুল্ক দেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ ৫০টি দেশ।
শুক্রবার (১ আগস্ট) এমনই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে নিজের শর্তে বাণিজ্য চুক্তি করার পর এবার ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন ঘোষিত রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ (পারস্পরিক শুল্ক) তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ ৫০টির বেশি দেশের পণ্যে ভারতের তুলনায় কম শুল্ক ধার্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পণ্যে এখন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী যেসব দেশ পণ্য রপ্তানি করে, তাদের পণ্যে কম শুল্ক বসানোর কারণে ভারতীয় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে শ্রমনির্ভর ও উচ্চমূল্যের ইলেকট্রনিক পণ্যে এর প্রভাব বেশি পড়বে।
এমনকি কোনও চুক্তি না থাকলেও বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে— যা তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বাজারে ভারতের বড় প্রতিযোগী। ঘোষিত নতুন শুল্ক হার আগামী ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ শতাংশ, যদিও দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, পাকিস্তানের তেল মজুত খাতে দুই দেশ একসঙ্গে ব্যাপকভাবে কাজ করবে।
এছাড়া ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন (প্রতিটি ১৯ শতাংশ) হচ্ছে আসিয়ানভুক্ত দেশ— যাদেরকেও ভারতের তুলনায় কম শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস খাতে এসব দেশের প্রবেশাধিকার ভারতের চেয়ে বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পণ্যে কম শুল্ক বসানো হলে ভারতের তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার জন্য অনুকূল শুল্ক কাঠামো ভারতের দ্রুত বিকাশমান অ-চামড়াজাত জুতা শিল্প ও ইলেকট্রনিকস খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এর আগে হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হতাশ। হাসেট বলেন, “তিনি মনে করেন, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হলে পরিস্থিতির সমাধান হবে এবং এতে আমেরিকানদের উপকার হবে।”
নতুন শুল্ক সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব বাণিজ্য অংশীদার ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে বা যারা নিরাপত্তা ও বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তারা এই নতুন শুল্কের আওতায় থাকবেন যতক্ষণ না চুক্তি চূড়ান্ত হয় এবং পরবর্তী নির্দেশ জারি করা হয়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি আটকে আছে কৃষি ও গাড়ি খাতসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছিল, জেনেটিকালি মোডিফায়েড (জিএম) ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই ভারতের।
কৃষি খাত দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) আগে থেকেই ভারতের জিএম পণ্যে নিষেধাজ্ঞাকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করে আসছে।
ইউএসটিআর-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট জিএম উৎস থেকে আসা খাদ্যপণ্যের জন্য নিয়ন্ত্রণের বিধান রেখেছে। তবে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এফএসএসএআই) এখনো চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করেনি। ভারতের জৈবপ্রযুক্তি অনুমোদন প্রক্রিয়া ধীরগতির, অস্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক প্রভাবাধীন হওয়ায় রপ্তানিকারক দেশগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক পণ্যে অনুমোদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারত যেখানে নিজের তৈরি পোশাক, চামড়া এবং জুতা খাতের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার চাইছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাতের বাজারে প্রবেশ করতে। কিন্তু ছোট চাষিদের প্রাধান্য ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এটি ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ভারত যেন জিএম পণ্যের ওপর থেকেও নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়।
এসএন