বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ পরিবহনে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)।
শুক্রবার (১ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটি রিয়েল টাইমে ৪ দশমিক ০০ টেরাবাইট প্রতি সেকেন্ড ব্যান্ডউইথ সরবরাহের গণ্ডি অতিক্রম করেছে। জুলাই মাসে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক স্টারলিংক ইন্টারনেটের জন্য ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের পর এই সাফল্য ধরা দেয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাত্র তিন মাস আগেই, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বিএসসিপিএলসি তিন টেরাবাইট ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের মাইলফলক স্পর্শ করেছিল। এর আগে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যান্ডউইডথ প্রবৃদ্ধি অনেক ধীরগতির ছিল—এপ্রিলের আগের আট মাসে মাত্র ১.১০ টেরাবাইট সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল। অথচ এখন মাত্র তিন মাসেই এক টেরাবাইটের প্রবৃদ্ধি অর্জন করলো রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানিটি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি একসময় ব্যবহারের বাইরে থাকা ব্যান্ডউইডথ সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য হারে ক্যাপাসিটি ধরে রেখেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পূর্ববর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের ৬৫ শতাংশের বেশি সক্ষমতা অব্যবহৃত ছিল বলে তথ্য রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ ২ দশমিক ২ টেরাবাইটের বেশি বেড়েছে। বিগত এক বছরে সরবরাহ বৃদ্ধির হার ১০৫ শতাংশের বেশি, যা এ খাতে একটি বিরল অর্জন।
বিএসসিপিএলসি বলছে, এই অগ্রগতির পেছনে কাজ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নীতিগত সহায়তা, কোম্পানির ব্যবস্থাপনার একাগ্র প্রচেষ্টা এবং ধারাবাহিকভাবে দেওয়া মূল্যছাড়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি দুই দফায় বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হয়, যা ব্যান্ডউইডথ বাজারে প্রতিযোগিতা ও চাহিদা দুটোই বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয়েও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মূলত, বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যবহৃত মোট ব্যান্ডউইডথের বড় একটি অংশ বিএসসিপিএলসি সরবরাহ করছে। সম্প্রতি বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) একটি সংশোধিত লাইসেন্সিং গাইডলাইন জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- সব আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) অপারেটরকে তাদের মোট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের অন্তত ৫০ শতাংশ সাবমেরিন ব্যান্ডউইডথ থেকে নিতে হবে।
এছাড়া, ভারতের একতরফা ইন্টারনেট নির্ভরতা হ্রাস এবং সাবমেরিন ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার উৎসাহিত করতে বিএসসিপিএলসি নতুন কিছু বর্ধিত সুবিধা চালু করেছে। যে আইআইজি অপারেটররা তাদের ব্যান্ডউইডথের ৫০ শতাংশের বেশি সাবমেরিন উৎস থেকে গ্রহণ করছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, সাধারণ ডিস্কাউন্টেড বাল্ক প্যাকেজের বাইরে ডেটা সেন্টার, ক্লাউড এবং হাইপার স্কেলার ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করা হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে বিদ্যমান সি-মি-ইউ ৪ ও সি-মি-ইউ ৫ সাবমেরিন কেবল সিস্টেম ছাড়াও নতুন করে সি-মি-ইউ ৬ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এর সংশোধিত রুটের জন্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং সর্বশেষ একনেক সভায় এটি অনুমোদনও পেয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিএসসিপিএলসির সঙ্গে ১৭ টেরাবাইট নতুন ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি যুক্ত হবে, যা দেশের আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
টিকে/