সর্বনাশা 'ডিপফেইক ভিডিও' মোকাবেলায় ফেসবুক ও মাইক্রোসফট

ডিপফেইক ভিডিও হচ্ছে এমন ভিডিও যেখানে এক ব্যক্তির স্থানে অন্য ব্যক্তিকে নিখুঁতভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় তা সনাক্ত করতে গাঁটছড়া বাঁধছে মাইক্রোসফট ও ফেসবুক। তাদের এই জোট ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একাডেমিক’ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপফেইক ভিডিও সনাক্তকরণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বিনিয়োগ করতে চলেছে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার। প্রজেক্টের অংশ হিসেবে গবেষকদের জন্য বাজেটের একটি বিশেষ অংশ বরাদ্দ করা হবে- নিখুঁত ডিপফেইক ভিডিও বানানোর জন্য, যাতে করে ‘ডিপফেইক ডিটেকশন টুলস’ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়া ডিসেম্বরে যেসব ভিডিও মুক্তি দেয়া হবে, তার সবগুলিতেই পেশাদার অভিনেতাদেরকে ব্যবহার করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২০ সালের নভেম্বরে, নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সামাজিক মাধ্যমগুলোর উপর ভুয়া ভিডিও সনাক্তকরণের চাপ তত বাড়ছে। কারণ ‘ডিপফেইক প্রযুক্তি’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে হাইপার-রিয়েলিস্টিক ভিডিও তৈরিতে সক্ষম। যেখানে ব্যক্তিকে এমন কিছু করতে বা বলতে দেখা যায়, যা আসলে তিনি করেননি বা বলেননি।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যাবে, যা জনমতের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। রাজনীতি ছাড়াও এই ডিপফেইক ভিডিও দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক। আবার অনেকেই হতে পারেন প্রতারণার শিকার।

আসন্ন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাই করনেল টেক, এমআইটি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসি বার্কেলে, ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, কলেজ পার্ক এবং আলবানি- এসইউএনওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে ডিপফেইক ভিডিও মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে ফেসবুক ও মাইক্রসফট।

এবিষয়ে ইউসি বার্কেলের প্রফেসর হ্যানরি ফরিদ জানান, “তথ্যের যুগ থেকে জ্ঞানের যুগে ফিরে যেতে, আমাদেরকে অবশ্যই সত্য থেকে মিথ্যাকে আলাদা করতে সক্ষম হতে হবে।”

তবে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিদ্ধার্ত গার্গ এবিষয়ে মন্তব্য করেন, “এটা একটা ইঁদুর-বেড়াল খেলার মতন। আমি যদি একটা ডিপফেইক ডিটেক্টর বানাই, তাহলে আমি আক্রমণকারীদের হাতে এমন কিছু তুলে দেবো, যার বিরুদ্ধে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ফের নতুন কিছু বানাবে।”

সব থেকে ভয়ের ব্যাপার হলো, এই ডিপফেইক প্রযুক্তিটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে। সম্প্রতি ‘জাও’ নামের একটি এপ্লিকেশন বাজারে ছাড়া হয়, যেখানে সাধারণ ব্যবহারকারীরা মুভিস্টারদের জায়গায় নিজের মুখমণ্ডল বসিয়ে দিতে পারছেন। যা ইতিমধ্যে দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, একইসঙ্গে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে প্রযুক্তি সচেতন মানুষের মনে।

ফেসবুক ও মাইক্রোসফটের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সফল হলে তা মানুষকে অযথা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বার্সা-ইন্টার ম্যাচে ৬ গোলের উৎসব! May 01, 2025
img
কারাগারে কয়েদির মৃত্যু, ১৩ ঘণ্টা পর জানানো হলো পরিবারকে May 01, 2025
img
ছাত্রীদের সঙ্গে একসঙ্গে গোসল! ‘নীল দিঘি’ বিতর্কে নোবিপ্রবি May 01, 2025
img
১১ বছর ধরে ভাত না খাওয়া সেই নিজাম উদ্দিনের পাশে তারেক রহমান May 01, 2025
img
ফ্যাসিস্টদের সমর্থক মালিকানাধীন কারখানা বন্ধ করা অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত: রিজভী May 01, 2025
img
মাউশি কার্যালয়ে দুর্নীতি, ৯২ ফাইল আটকে! May 01, 2025
img
রাজধানী থেকে পুরনো যানবাহন অপসারণ করবে বিআরটিএ May 01, 2025
img
বাংলাদেশ সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে : শফিকুল আলম May 01, 2025
img
ইনজুরিতে আইপিএল থেকে ছিটকে গেলেন ম্যাক্সওয়েল May 01, 2025
img
মানবিক করিডোর করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের অনুমতি লাগবে: জাতিসংঘ May 01, 2025