বিএনপিকে উদ্দেশ করে ‘একটি দল মুখে বলে মানি, কিন্তু আসল জায়গায় মানে না’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘ঈমানের তিন ধাপ- মুখে স্বীকার, মনে বিশ্বাস, আর কর্মে বাস্তবায়ন। সংস্কারেরও তিন ধাপ- সংস্কারে একমত হওয়া, আইনি ভিত্তি দেওয়া ও বাস্তবায়ন। ওনারা নাকি সবই মানেন। আসলে প্রথম ধাপ মানে কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ মানে না। কারণ তারা বলেন, আমরা ওয়াদা করছি, ক্ষমতায় গেলে আমরা করবো।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত গণমিছিলোত্তর সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে (মহাখালী রেলগেট) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ বিশাল সমাবেশ ও গণমিছিলের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘তারা বলেন, আমরা ওয়াদা করছি, ক্ষমতায় গেলে আমরা করবো। ঈমান কী তাদের এতোই মজবুত যে, তারা মনে হয় কখনোই ওয়াদা ভঙ্গ করেন না! তারাও তো ক্ষমতায় ছিলেন। ওয়াদা কি রেখেছিলেন?’
স্পষ্ট করে বলছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী কখনো আপস করবে না। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, টেকসই গণতন্ত্রের জন্য জামায়াত লড়াই করে যাবে উল্লেখ করে তাহের বলেন, বিগত দিনগুলোতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার সর্বশেষ নির্বাচন। কেন্দ্র দখল, টাকার খেলা, বিরোধী দলকে কেন্দ্রে আসতে বাধা, দিনের ভোট রাতে, ভোটারবিহীন নির্বাচনে অনেক ভোট কাস্ট দেখিয়ে ভুয়া নির্বাচনের রায় ঘোষণা আমরা দেখেছি।
গত ৫৪ বছরের ট্রাডিশনাল নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা, তা জনগণের অধিকার নিশ্চিত করছে না। তাই নতুনভাবে নতুন ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে, যা অনেক দেশে আছে। প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনে (পিআর) কেন্দ্র দখল, টাকার খেলার সুযোগ নেই, এই পদ্ধতিতে ভোটের অধিকার কাউন্ট করা হবে। ৫১ শতাংশ পেলে জয়ী, আর ৪৯ শতাংশ ভোটারের ভোট পেয়ে হেরে যাওয়া। এতে করে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না।
পিআর পদ্ধতিতে সারাদেশে যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে আসন পাবে, এটা তো সহজ উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর এই শীর্ষ নেতা বলেন, একদলের সিনিয়র নেতা আমাকে বলছেন, পিআর কি বুঝি না। আমি বলছি, আপনি যদি না বোঝেন, তাহলে একদিন আমার কাছে ক্লাস করেন, আমি পড়াব, আপনাকে বুঝিয়ে দেব, বিনে পয়সায় শিক্ষা দেব।
আরেক দলের নেতা জবাব দিয়েছেন, যে নেতা পিআর বোঝেন না, তিনি সারা দুনিয়ার শাসন ব্যবস্থার খবর রাখেন না, সেরকম নেতার রাজনীতি করাই ঠিক না।
তাহের প্রশ্ন তুলে বলেন, যারা পিআর চায় না, কেন চায় না? চায় না এই কারণেই যে, জনপ্রিয়তা নেই, কিন্তু মাস্তান আছে, জনপ্রিয়তা নেই, অবৈধ চুরি চান্দার টাকা আছে। আমাকে অনেকে বলে, বিরোধী পক্ষের যারা নির্বাচনের ক্যানডিটেট হতে চান, এক বছর আগেই নির্বাচনের যে খরচ তার চেয়ে বেশি উঠিয়ে ফেলছে, তারা তো টাকার কাছে যাচ্ছে জনগণের কাছে যায় না। সুতরাং পিআর পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। পরিষ্কার বলেছি সংস্কার হতে হবে। সংস্কার করেই নির্বাচন।
তাহের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সংস্কার যদি মানেনই, তাহলে আইনি ভিত্তি দিতে সমস্যা কোথায়? আইনি ভিত্তি দিতে কি কি অসুবিধা বলেন, সেটার জবাব আমি দেব। পিআর যদি না বোঝেন আসেন বিতর্ক করি, সবার সামনে, বায়তুল মোকাররম, প্রেস ক্লাবের সামনে বিতর্ক করি।আর যদি না আসেন তখন বুঝব আপনার মনের কথা ও মুখের কথায় মিল আছে।
কিছু সংখ্যক মানুষ ছাড়া এবং কয়েকটি দল ছাড়া সবাই, সব মানুষই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা। আপনারা মুক্তিযোদ্ধা, আমরা দাঁড়িয়ে আছি, আমরাও মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযুদ্ধের পেছনে অনেক গল্প আছে, লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা রক্তাক্ত হয়েছি, জীবন দিয়েছি, জেলে গেছি। সেই অতীত আমরা বলতে চাই না। কারণ আমরা প্রত্যেকেই সাক্ষী। কারণ আমরা গত ১৫ বছর নির্যাতনের শিকার ছিলাম।
তাহের বলেন, আর আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা ‘গনকেস’। দিল্লি বহুদূর। তাদের নিয়ে কথা বলার কোনো দরকার নেই। কারণ আওয়ামী লীগ, স্বৈরাচার আর আসতে পারবে না, মানুষ তাদের চিনে ফেলেছে। আর এখন যারা নতুন করে স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করছে জনগণ তাদেরও ইনশাআল্লাহ আসতে দেবে না।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারূ সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার এবং ঢাকা মহনগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন।
এমআর/টিকে