দশ বছর! দশটি বছর কেটে গেছে তাদের দূরত্বে, আলাদা জীবনে, আলাদা পর্দায়। কিন্তু তবু একটি নাম আজও জড়িয়ে থাকে অন্যটির সঙ্গে। তারা দেব আর শুভশ্রী। সেই দুই নাম একসঙ্গে মঞ্চে ফিরতেই যেন টালিগঞ্জে ফিরল পুরোনো যুগের গন্ধ, দুই তারকার সঙ্গে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসে গেলেন দর্শকও।
সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে কেবলই দেব আর শুভশ্রী। কেউ নস্টালজিক হয়ে লিখছেন, কেউ তাদের নতুন শুরুর কথা পরামর্শ দিয়ে লিখছেন। কেউ ট্রলে মেতেছেন তাদের স্বামী ও বান্ধবীদের নিয়ে। অনেকে তৈরি করেছেন
দর্শকের ভালোবাসায় বাঁচে কিছু সম্পর্ক। দেব-শুভশ্রীর সম্পর্ক যেন তেমনই। এক দশক পর কলকাতার নজরুল মঞ্চের আলো-আঁধারি ভেদ করে একসঙ্গে হাজির হলেন তারা। উপলক্ষ- দীর্ঘদিন আটকে থাকা সিনেমা ‘ধূমকেতু’র ট্রেলার লঞ্চ। আর সেই এক মঞ্চে বসেই তারা ফিরিয়ে আনলেন পুরোনো প্রেম, মান-অভিমান, ভুল বোঝাবুঝি, নস্টালজিয়া। শুরু করলেন নতুন করে বন্ধুত্বটাও। একে অপরকে ফলো করলেন সোশ্যাল মিডিয়াতে। কেন? সেই প্রশ্নের জবাবে দর্শকের সমর্থনে দেবের উত্তর ছিল, ‘এমনি’।
সঞ্চালকের এক প্রশ্নে হেসে দেব বলেন, ‘এই জন্মে অন্তত আমি আমার নাম থেকে শুভশ্রীকে সরাতে পারব না। শুভশ্রীও পারবে না। যখনই কোনো জুটি নিয়ে আলোচনা হবে, আমাদের নাম আসবেই, আলাদা করা যাবে না।’
শুভশ্রীও হেসে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করিনি আমাদের জুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে। দর্শকেরাই রেখেছে। তাদের ভালোবাসায়, আবেগে, কান্নায়, উচ্ছ্বাসে।’
দেব জানালেন, আজও স্কুলের বাচ্চারা দেবদেবীর জায়গায় লেখে দেব-শুভশ্রী। তাতে বোঝা যায় এই জুটির প্রভাব ঠিক কতটা গভীরে গেঁথে রয়েছে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে।
২০১৪ সালের শুটিং হলেও আটকে যায় কৌশিক গাঙ্গুলীর পরিচালনায় ‘ধূমকেতু’। এটাই ছিল দেব-শুভশ্রীর শেষ একসঙ্গে কাজ। সিনেমা যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সম্পর্কেও নেমে এসেছিল ছায়া। দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও কেটে যায় যোগাযোগ। দেব সরাসরি ব্লক করে দিয়েছিলেন শুভশ্রীকে।
তবে এবার সেই সব আড়াল ভেদ করে এলেন একসঙ্গে। মঞ্চে বসেই একে অপরকে আনব্লক করলেন। ফলো করলেন ইনস্টাগ্রামে। একসঙ্গে তুললেন সেলফি। দর্শকদের সামনে গাইলেন গানও। শুভশ্রী বললেন, ‘অনেক জায়গায় দেখা হলেও কথা হতো না। এবার পুরোনো সব ভুলে, শুধু কাজ আর ভালোবাসার জায়গা থেকে একসঙ্গে আসা।’
২০০৯ সালে ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল দেব-শুভশ্রীর রসায়নের। এরপর একে একে এসেছে ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘রোমিও’, ‘খোকাবাবু’, ‘খোকা ৪২০’ সবই সুপারহিট। পর্দায় তাদের প্রেম যেমন ছিল আগুনের মতো, বাস্তব জীবনের সম্পর্কও হয়ে উঠেছিল টলিউডের হট টক। তবে ব্যক্তিগত কারণে তা ভেঙে যায়। জীবন গড়েন আলাদা পথে। শুভশ্রী রাজ চক্রবর্তীর স্ত্রী ও একজন মা। দেবও এখন রুক্মিণীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত।
তবে স্মৃতি মুছে যায় না। আজও দেব-শুভশ্রী মানে হাজারো ভক্তের কাছে প্রথম প্রেম। সেটা আবারও প্রমাণ হলো নজরুল মঞ্চে তাদের একত্রিত হওয়ার উচ্ছ্বাসে।
এই মঞ্চে দাঁড়িয়েই দুজনই জানালেন, ভালো গল্প, পরিচালক, প্রযোজক পেলে আবারও একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। শুভশ্রী যদিও মজা করে বলেন, ‘দেবের প্রোডাকশনে আমি কাজ করেছি, ও আমারটায় করবে কি?’ দর্শক সরাসরি চিৎকার করে ওঠে, ‘বিনা পারিশ্রমিকে করুক!’
কেএন/এসএন