আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনাই দিল্লির দোসরদের মিশন : ঢাবি শিবির সভাপতি

চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলার নয়া বয়ান ৫ আগস্টের পর সচেতনভাবেই বাজারে চাওর করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।

তিনি বলেছেন, ‘তারা একাত্তর ও চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনীতি শুরু করেছে। হাসিনার গণহত্যাকে নর্মালাইজ করে এবং প্রকারান্তরে দায়মুক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনাই তাদের মিশন।’

বুধবার (৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

পাঠকদের জন্য এস এম ফরহাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো—

‘চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলা’র নয়া বয়ান ৫ আগস্টের পর সচেতনভাবেই বাজারে চাওর করা হয়েছে। চব্বিশ ও একাত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনা। একাত্তর এই জাতিকে আলাদা মানচিত্র ও ভূমি দিয়েছে এবং হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের ভয়াল নির্যাতন থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়েছে চব্বিশ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বাংলাদেশে চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলার রাজনীতি করেনি।

যারা বারবার দুটোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর বয়ান তৈরি করেছে, তারাই একাত্তর ও চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনীতি করেছে। আমরা মনে করি, একটিকে অপরটির মুখোমুখি দাঁড় করানোর রাজনীতি মূলত চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে পরোক্ষ ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর অপচেষ্টা। হাসিনার গণহত্যাকে স্বাভাবিক (নর্মালাইজ) করে এবং প্রকারান্তরে দায়মুক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনাই তাদের মিশন। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব কিংবা হীন স্বার্থে এই আরোপিত বয়ানে সাবস্ক্রাইব করছে কতিপয় স্বঘোষিত ‘বাংলাদেশপন্থী’ ও ‘পোস্ট-আইডিওলোজি’ রাজনীতির কতিপয় ধারকগণ।

চব্বিশে আওয়ামী লীগ ও শাহবাগের রাজনৈতিক করুণ পরাজয়ের পর বাজারে এই কল্পিত ন্যারেটিভ জিইয়ে রাখার মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৈরি করে বিভাজনের পুরনো অপচেষ্টা মূলত দিল্লির নয়া প্রকল্প। আর এই নয়া প্রকল্পকে সফল করতে উঠেপড়ে লেগেছে পতিত হাসিনাশাহীর প্রত্যক্ষ সহযোগী ও দিল্লির দোসররা।

নতুন করে হাসিনার রেখে যাওয়া পুরনো বয়ানের সওদাগরি শুরু করেছে শাপলা-শাহবাগের এই মব সন্ত্রাসীরা। তাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হলো মানুষের ওপর হাসিনাবাদ চাপিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধকে হাসিনার মতো করেই ধারণ করতে হবে এবং হাসিনার তৈরি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকেই বাংলাদেশের রাজনীতি নির্মাণ করতে হবে।

এটি গণহত্যাকারী হাসিনাকে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে স্বাভাবিক করার (normalize) এক ঘৃণ্য চক্রান্ত। তাই, তারা মুক্তিযুদ্ধের অপরাপর সকল ন্যারেটিভকে খারিজ করে। তাদের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য বয়ান হলো হাসিনার বয়ান। মুজিব-বাকশাল ও হাসিনা-শাহবাগ প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধকে একটি গোষ্ঠীর ইতিহাস বানিয়ে খোদ মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সুতরাং, যাদের বয়ান গণহত্যার সম্মতি উৎপাদন করে এবং খোদ মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে, তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য দরকার। আমরা মুক্তিযুদ্ধের হাসিনাবাদী ও শাহবাগী বয়ানকে ইনকার করি। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে ঐতিহাসিক দুর্নীতি ও বেইনসাফি হয়েছে, আমরা তার মূলোৎপাটন করে মুক্তিযুদ্ধের গণআকাঙ্ক্ষার ইতিহাস বিনির্মাণ করব।

নতুন বাংলাদেশে এই নব্য হাসিনাবাদের স্লোগানধারীরাই নানা কায়দায় ছাত্রশিবিরকে ফ্যাসিবাদী যুক্তিকাঠামোয় সমস্যাজনক করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। দিল্লির এই এক্সটেনশন হাসিনার কায়দায় জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক সাদিক কায়েমের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তানি ট্যাগ।

বাংলাদেশকে যারা ধারণ করে না, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন যারা চায় না, চব্বিশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংহতিকে যারা ধারণ করে না, বাংলাদেশের অগ্রগতিকে যারা দিল্লির থ্রেট মনে করে—তাদের একমাত্র লক্ষ্য যেকোনো উপায়ে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।

আমরা মনে করি, একাত্তরের সব যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া উচিত ফেয়ার ট্রায়ালে। শাহবাগ কায়েম করে যারা মব সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, হাসিনাকে ক্রসফায়ারের বৈধতা দিয়েছে, শাপলা গণহত্যার পক্ষে প্রত্যক্ষ সম্মতি উৎপাদন করেছে এবং চব্বিশে নির্বিচারে গুলি করে নাগরিক হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে, তাদের বিচারও করতে হবে এবং এই বিচারও এমনভাবে হতে হবে, যেখানে কোনো মৌলিক বিচারিক নীতিমালা ভঙ্গ করা হবে না।

হাসিনা ও শাহবাগের ফ্রেমওয়ার্কে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে অবমাননা করার নামান্তর। যারা সুষ্ঠু বিচারে বিশ্বাস করে না, তারাই মব সন্ত্রাস করে এবং তারাই হাসিনাকে সব অবৈধ কাজের বৈধতা দিয়েছে।

জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাকশাল, মুজিববাদ ও শাহবাগকে মুক্তিযুদ্ধের সুরতে হাজির করে এর বিরোধিতা করাকে ‘রাজাকার’ বানানোর ন্যারেটিভ হাজির করেছে হাসিনা শাহীর প্রত্যক্ষ সহযোগীরা।

মুক্তিযুদ্ধ থেকে শাহবাগী ফ্যাসিবাদ পর্যন্ত প্রতিটি গণহত্যার অবশ্যই যথাযথ বিচার হতে হবে। কিন্তু স্কাইপি কেলেঙ্কারি, আইনজীবীকে আইনঘরে নিয়ে যাওয়া, সাক্ষীকে গুম করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া কিংবা মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোনো ট্রায়াল হলে, সেটা অবশ্যই বিচারিক হত্যাকাণ্ড। আমরা বিচার ও নিয়মতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী।

সুতরাং, চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণআকাঙ্ক্ষার ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেকোনো অবিচার ও মব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আজীবন জারি থাকবে।

এমআর/টিএ    

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আরপিও সংস্কারের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে বৈঠকে ইসি Aug 07, 2025
img
কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ৪৮ কোটি টাকা লোপাট, আসামি সাইফুজ্জামানসহ ৪৭ Aug 07, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ৬ মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর Aug 07, 2025
img
রমজানের আগেই নির্বাচন জনদাবি ছিল: সালাহউদ্দিন Aug 07, 2025
img
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে রাখা যাবে না : ফারুক Aug 07, 2025
img
বিমানবন্দরের চারপাশে ২৬৩টি অনুমোদনহীন উঁচু ভবন, জানানো হয়েছে রাজউককে Aug 07, 2025
img
বেরোবির সাবেক ভিসি কলিমউল্লাহ গ্রেপ্তার Aug 07, 2025
img
দুদকের মামলায় পাপিয়া দম্পতির রায় ১৪ আগস্ট Aug 07, 2025
img
১০ বছরের সাজা থেকে জি কে শামীমকে হাইকোর্টের খালাস Aug 07, 2025
নির্বাচনের বাজেট নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা Aug 07, 2025
img
শাহবাগীদের প্রতিরোধে এনসিপি নেত্রীর কড়া বার্তা Aug 07, 2025
img
আজ মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশি "12th Fail" Aug 07, 2025
img
হিন্দিতে কথা বলতে নারাজ কাজল, মেজাজ হারালেন সাংবাদিকের প্রশ্নে Aug 07, 2025
img
২ মাসের ব্যবধানে ফের যুক্তরাষ্ট্র সফরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান Aug 07, 2025
img
হিরো আলম প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে, ডিভোর্স দিব : রিয়া মনি Aug 07, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আজ থেকে নতুন হারে শুল্ক দিতে হবে বাংলাদেশকে Aug 07, 2025
img
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক Aug 07, 2025
img
জুলাই শহীদের তালিকা থেকে ৮ জনের নাম বাতিল করে গেজেট প্রকাশ Aug 07, 2025
img
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা : অভিযোগ গঠনে আসামিপক্ষের শুনানি ১৩ আগস্ট Aug 07, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন মুফতি ফয়জুল Aug 07, 2025