যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ভারতীয় দাবিকে মিথ্যা ও হাস্যকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিন মাস আগে সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ এমন দাবিকে অবিশ্বাস্য বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভারত পাকিস্তানের একটি বিমানকেও আঘাত বা ধ্বংস করতে পারেনি।
সংঘাতের প্রায় তিন মাস পর শনিবার (৯ আগস্ট) বেঙ্গালুরুতে এক অনুষ্ঠানে ভারতে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং সামরিক সংঘাতে পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি বড় সামরিক বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেন। তার এমন দাবিকে কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
তিনি পাল্টা দাবি করেন, পাকিস্তানের কোনো বিমান ধ্বংস হয়নি, বরং পাকিস্তান ভারতের ছয়টি বিমান এবং ড্রোনসহ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এসময় তিনি নয়াদিল্লির এমন বক্তব্যকে হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেন।
খাজা আসিফ দাবি করেন, যুদ্ধ জেতা হয় পেশাদারিত্ব দিয়ে, মনগড়া গল্প দিয়ে নয়। সত্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলে দুই দেশেরই বিমানের তালিকাগুলো স্বাধীন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও পাকিস্তান সংঘাতের পরপরই, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেছিল।
স্বাধীন পর্যবেক্ষক, বিশ্ব নেতা, ঊর্ধ্বতন ভারতীয় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে গোয়েন্দারাও রাফালসহ একাধিক ভারতীয় বিমানের ক্ষতির ব্যাপক স্বীকৃতি দিয়েছেন।’
আসিফ দাবি করেন, ‘সংঘাতে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান, এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাটারি, ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং বেশ কয়েকটি ভারতীয় বিমানঘাঁটি অকার্যকর করে দিয়েছে। এছাড়াও নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি পাতিস্তানের চেয়ে অনুপাতিকভাবে বেশি।’
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত অভিযোগ করে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সহায়তা করেছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ নাকচ করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানায়।
এ নিয়ে উত্তেজনার এক পর্যায়ে গত ৬ মে দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আকস্মিক বিমান হামলা চালায় ভারত। যার নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের দাবি, জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতের হামলার পর ‘অপারেশস বুনিয়ানুন মারসুস’ নামে পাল্টা হামলা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। এতে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এবং সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়। টানা কয়েকদিনের সংঘাতের পর ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।
সংঘাতের প্রায় তিন মাস পর গত শনিবার প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমান ধ্বংসের দাবি করে ভারত। দেশটির বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান আমরা নিশ্চিতভাবে ধ্বংস করেছি। এছাড়া একটি বড় (সামরিক) বিমান রয়েছে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে হামলা করা হয়েছিল।’
তিনি আরও দাবি করেন, এই ছয়টি বিমানই ধ্বংস করা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ ব্যবহার করে। এই ছয়টি বিমান ধ্বংসের পাশাপাশি আকাশপথে পাক সামরিক ঘাঁটিতে হামলার সময় আরও বেশ কিছু বিমানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
এমআর/টিকে