গাজার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সুদানে পাঠাতে চায় ইসরায়েল

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তর করতে চায় ইসরায়েল। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির সঙ্গে ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে আলোচনাও শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার।

দুই দেশের এই আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত ও ওয়াকিবহাল ৬টি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি নিউজ।

আলোচনা কতদূর পর্যায়ে আছে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে সত্যিই যদি এ ইস্যুতে দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে ইসরায়েলের সমঝোতা হয়, তাহলে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য তা হবে একটি বড় দুঃসংবাদ। কারণ যুদ্ধ ও সংঘাতপীড়িত জন্মভূমি থেকে এমন এক দেশে যেতে হবে তাদের যেখানে দারিদ্র্য চরম এবং প্রায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চলছে। সেই সঙ্গে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের ঝুঁকি তো আছে।

গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের ব্যাপারে প্রথম আগ্রহ জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ার পর একাধিকবার তিনি বলেছেন যে গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের তিনি ‘নিরাপদ’ ও ‘সংঘাতের ঝুঁকিমুক্ত’ কোনো দেশে স্থানান্তর করতে চান। বিভিন্ন দেশকে এ ইস্যুতে এগিয়ে আসা এবং গাজার ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে আর কথা বাড়াননি ট্রাম্প।

তবে অতি সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ট্রাম্প একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ এবং গাজার ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে ট্রাম্প যা বলেছেন, তার সঙ্গে একমত তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম আই২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমি যদ্দুর জানি, যুদ্ধের আইন হলো যে এলাকায় যুদ্ধ হবে— সেখান থেকে বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া, তারপর পূর্ণ শক্তি দিয়ে শত্রুকে মোকাবিলা করা।”

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ইসরায়েল এবং দক্ষিণ সুদান উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এপি। তবে কোনো দেশের কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে দক্ষিণ সুদানে কর্মরত একটি মার্কিন লবিং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী জোয়ে স্লাভিক এপি নিউজকে জানিয়েছেন সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন যে সামনে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধি দক্ষিণ সুদানে আসছেন এবং তাদের এই সফরের প্রধান ‍উদ্দেশ্য হলো গাজার ফিলিস্তিনিদের বসবাসের জন্য সম্ভাব্য এলাকা নির্বাচন করা।

এপি নিউজকে স্লাভিক বলেন, “দক্ষিণ সুদানের সবচেয়ে সড় সংকট হলো দারিদ্র্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট। গাজার ফিলিস্তিনিদের যদি সেখানে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ইসরায়েলের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পাবে দক্ষিণ সুদান। তাছাড়া দক্ষিণ সুদানের ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর বেশ কয়েক জনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করলে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর সম্ভাবনা আছে।”

“সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, দারিদ্র্যপীড়িত স্লোগান এখন হন্যে হয়ে বন্ধুত্বের হাত খুঁজছে, আর ইসরায়েল সেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।”

দক্ষিণ সুদানের সিভিল সোসাইটির নেতৃস্থানীয় সদস্য এডমুন্ড ইয়াকানিও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। এপি নিউজকে ইয়াকানি বলেন, “আমি দেশের কয়েক জন সরকারি কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তাদের মধ্যে অন্তত চারজন আমাকে নিশ্চিত করে বলেছেন যে ইসরায়েলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের আলোচনা চলছে।”

সূত্র : এপি নিউজ

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিজের গড়া বিশ্বরেকর্ড ফের ভাঙলেন ডুপ্লান্টিস Aug 13, 2025
img
দেশে তামাকজনিত রোগে দিনে ৪৪২ জনের মৃত্যু Aug 13, 2025
img
আবারও বাড়ল জেট ফুয়েলের দাম Aug 13, 2025
img
নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ স্কোয়াডে হামজা চৌধুরী, থাকছে না সমিত Aug 13, 2025
img
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নিয়ে হাইকোর্টের রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট: অ্যাটর্নি জেনারেল Aug 13, 2025
img
ডাকসুতে এবার সবচেয়ে বয়স্ক ভোটার মাহমুদুল হাসান ইউসুফ Aug 13, 2025
img
সিরিয়ার দুই মন্ত্রীর একসঙ্গে তুরস্ক সফর Aug 13, 2025
img
৬০ টাকা কেজির চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১৫ টাকায় পাওয়া যাবে : খাদ্য উপদেষ্টা Aug 13, 2025
img
টটেনহামের নতুন অধিনায়ক হলেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার Aug 13, 2025
img
৫ মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ডে খায়রুল বাশার Aug 13, 2025
img
সরকারকে এক মাস সময় দিলেন শিক্ষকরা Aug 13, 2025
img
চার দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে আনিসুল হক Aug 13, 2025
img
ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের প্রাণহানি Aug 13, 2025
img
ডিজিটাল মাধ্যমে সক্রিয় থেকে অপতথ্যের মোকাবিলা করুন: তথ্যসচিব Aug 13, 2025
img
পার্টিতে সাইয়ারা জুটির ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত, নেটিজেনদের চোখে নতুন কৌতূহল Aug 13, 2025
img
সিলেটে সাদাপাথর লুটে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক Aug 13, 2025
img
এক বছরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের বিচার সংস্কার যাত্রা Aug 13, 2025
img
‘মেন্টালি ও ফিজিক্যালি সব দিক থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে চিন্তা করছি’ Aug 13, 2025
img
পঞ্চগড় সীমান্তে ২৩ জনকে বিএসএফের পুশ ইন Aug 13, 2025
img
বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে: গোলাম পরওয়ার Aug 13, 2025