মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল বলেছেন, ড. ইউনূসের রাষ্ট্রীয় সফর ‘শুধু একটি কূটনৈতিক ঘটনা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ নানা উদ্যোগের একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ কথা লেখেন।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি ও ইতিবাচক উন্নয়ন, বিশেষ করে কৌশলগত ও উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন বহুমুখী খাতে সহযোগিতা জোরদারের অগ্রগতি দেখে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।
তিনি জানান, এ সফরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, হালাল পণ্য, এসটিইএম, গবেষণা, শিক্ষা, সেমিকন্ডাক্টর এবং ব্লু ইকোনমি খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি ‘নোট অব এক্সচেঞ্জ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরে এসকর্ট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ইসমাইল বলেন, এই চুক্তিগুলো ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (এমইভি) কার্যকর করা। এই এমইভি বৈধ শ্রমিকদের নিজ দেশে পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও ভ্রমণের পর নতুন ভিসার আবেদন ছাড়াই পুনরায় মালয়েশিয়ায় ফেরত আসার অনুমতি দেবে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী এ পদক্ষেপকে ‘বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের প্রতি মালয়েশিয়ার কৃতজ্ঞতার প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যারা শুধু বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে চালিকাশক্তি নয়, বরং দেশটির বৃহত্তর সমাজের অংশ হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, এই নীতি প্রণয়নের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো বৈধ বিদেশি শ্রমিকদের কল্যাণ জোরদার করা। তারা কোথায় থেকে এসেছেন বা কী করেছেন, সেটা বিবেচ্য নয়।
ইসমাইল বলেন, এমইভি কার্যকর হওয়া বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার আরও বন্ধুত্বপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অগ্রসর দৃষ্টিভঙ্গির পথপ্রদর্শক হিসেবে সাহসিকতার প্রতিফলন ঘটাবে। এই ব্যবস্থার বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (কেডিএন) এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় (কেএসএম) বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবে।
মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ড. ইউনূসের সফর দুই দেশের মধ্যে ‘বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ’ আরও জোরদার করবে, যেহেতু ‘মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত’।
তিনি বলেন, কুয়ালালামপুরে ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ।
ইসমাইল জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের আলোচনায় বাণিজ্য, শিক্ষা ও শ্রমশক্তির মতো ঐতিহ্যবাহী খাতগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন সহকারী মন্ত্রী হিসেবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, কীভাবে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও আলোচনাগুলো উন্মুক্ততার মনোভাব, দক্ষতা ভাগাভাগির ইচ্ছা এবং একসঙ্গে আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ ছিল।
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে কেডিএন মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায় এর প্রভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া শরণার্থী সমস্যা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ্য করেছে এবং কূটনৈতিক চ্যানেল ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধানের প্রচেষ্টায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
কেডিএন বিশ্বাস করে, আঞ্চলিক শান্তি কেবল আসিয়ানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব এবং এ কারণে মন্ত্রণালয় মিয়ানমারে আসিয়ানের শান্তি মিশনকে সমর্থন করে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন।
ইসমাইল বলেন, কেডিএন এসব নীতি ও চুক্তির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যার মধ্যে বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন তদারকি অন্তর্ভুক্ত।
তিনি আরও বলেন, এই কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধু কাগজে-কলমে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং দুই দেশের নাগরিকদের জীবনে বাস্তব প্রভাব ফেলে—চাকরির সুযোগ, দক্ষতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইসমাইল বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আরও বহু দূর এগিয়ে যেতে পারবে, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং সুবিধা-সুবিধা ভাগাভাগির মানসিকতা দ্বারা পরিচালিত হবে।
কেএন/এসএন