টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ক্রিকেটাররা এখন অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনাল আগামী ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এই সিরিজ শেষ হতেই ২৮ থেকে ৩১ আগস্ট দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চারদিনের একটি ম্যাচে অংশ নেবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
যদিও এই ম্যাচের জন্য এখনও লাল বলের ম্যাচটির জন্য দল ঘোষণা করেনি বিসিবি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ এবং ১৮ আগস্ট দুই ভাগে ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন দলটির ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের এই সফরকে মূলত ২০২৬ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ায় দুই টেস্টের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ওই দুটি ম্যাচ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-২০২৭ চক্রের অংশ। সবমিলিয়ে ৬ জন খেলোয়াড় রয়েছেন, তারা হলেন ইফতেখার ইফতি, অমিত হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদাত হোসেন দিপু, এনামুল হক ও হাসান মুরাদ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চারদিনের ম্যাচে অবশ্য স্পটলাইটে থাকবেন কয়েকজন ক্রিকেটার।
এরমধ্যে তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটার ইফতেখার ইফতি ও অমিত হাসান অন্যতম। মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসোবে আলো ছড়াতে পারের শাহাদাত হোসেন দিপুও। এ ছাড়া পেসার হিসেবে এনামুল হকের সুযোগ থাকছে নিজেকে চেনানোর। বছর খানেক ধরে ইফতি, এনামুল ও অমিতরা ঘরোয়া ক্রিকেটে আলো ছড়াচ্ছেন। এছাড়া তরুণ ব্যাটার দিপুর অভিষেকও হয়েছে জাতীয় দলের জার্সিতে।
যে কারণে স্পটলাইটে থাকা এই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনের ভাব শুনেছেন এক গণমাধ্যমের ক্রীড়া প্রতিবেদক, দেখে নেওয়া যাক কী বললেন তারা।
ইফতেখার ইফতি
তরুণ এই ক্রিকেটারের আশা, ‘অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণত স্পোর্টিং উইকেট থাকে, একটু বল বাউন্স হয় বেশি। চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু করার, প্রথমবার সুযোগ পেয়েছি। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ। ম্যাচের একাদশে যদি সুযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই ভালো করার লক্ষ্য থাকবে। আমি আমার শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখি। সেখানকার উইকেটটা সাধারণত ব্যাটিং-বোলিং দু’দিকেই সুবিধাজনক থাকে।’
তিনি আরও বলেন, প্রথমবার যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় খেলার সুযোগ থাকছে। সে জন্য অবশ্যই প্রথমে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ। মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভালো খেলার পরেই এমন সুযোগ পেয়েছি। মিরপুর একটা সেঞ্চুরি করেছিলাম, যে কারণে নির্বাচকরা আমাকে একটা বিবেচনা করেছে। এ দলের অস্ট্রেলিয়ায় সুযোগ হচ্ছে।
শাহাদাত হোসেন দিপু
ডানহাতি এই ব্যাটার বলেন, ‘আমি গত বছর এইচপির হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলেছিলাম। সেজন্য একটু অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই, যেটা এবারের খেলায় কাজে লাগাতে চেষ্টা করব। এখন আশা করছি ভালো কিছু হবে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা। আমি বাংলা ট্রাকে যখন অনুশীলন করেছিলাম, তখন অনেক চেষ্টা করেছি।’
এর আগেও অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছিলেন দিপু। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘গত বছর যখন খেলেছিলাম অস্ট্রেলিয়ায়, তখন সেখানে একটু বাউন্স ছিল। খুব বেশি বাউন্স যে সেরকম না। একেবারে ওলট-পালট বাউন্সও না। সেই বাউন্স সামলাতে নেটের স্লাবে অনেক কাজ করেছি। সোহেল স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। আর ম্যাচে কোন পজিশনে ব্যাটিং করব সেটি টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। দলেন ওপর নির্ভর করছে আমি কত নম্বরে ব্যাটিং করব।’
জাতীয় দলে ফেরার বিষয়েও এখন ভাবছেন না দিপু, ‘আমি আসলে ন্যাশনাল টিম নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তা করতেছি না। আপাতত সামনে আমার এই চার দিনের ম্যাচটা নিয়ে ভাবছি। যে সুযোগটা পেয়েছি সেটাই আসলে কাজে লাগাতে চাই। যেন ভালো খেলা উপহার দিতে দিতে পারি এটাই আসল চিন্তা।’
অমিত হাসান
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে নজর কাড়া এই ব্যাটার বলেন, ‘আমি আগেও এইচপির হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছি। এবার দ্বিতীয়বার যাচ্ছি, খুব বেশি কিছু চিন্তা করতেছি না। নিজের কাজটা করতে চাই, ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো খেলার চিন্তা করছি।
আগে যেহেতু অস্ট্রেলিয়াতে খেলেছি তাই সেখানকার উইকেট সম্পর্কে আমার মোটামুটি ধারণা আছে। এখানে বেশ কয়েকদিন অনুশীলন করেছি নেটে সোহেল স্যারের সঙ্গে। ইনডোরে এবং মাঠেও কাজ করেছি। ওখানে যেহেতু বাউন্স উইকেট থাকে, এটা নিয়ে বেশি কাজ করেছি।
‘অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাচ কিন্তু একটাই হবে। সুতরাং এটা নিয়ে আসলে বেশি চিন্তা নাই। আমি একদম স্বাভাবিক আছি, যেমনটা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি। এখানে যেমন বল বাই বল খেলার চেষ্টা থাকবে। আমি আসলে অতিরিক্ত কোন কিছু চিন্তা করতে চাই না।
বাড়তি কোনো প্রেশার নিতে চাই না। নিজের স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলতে চাই’, আরও যোগ করেন অমিত হাসান।
এনামুল হক
ঘরোয়া ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ে নজর কাড়া এনামুল হকও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সঙ্গে যাচ্ছেন। তিনি জানান, ‘প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাচ্ছি। সেখানকার পরিবেশ-কন্ডিশন কেমন সবকিছুই আসলে অনেক আগে থেকে ধারণা নিয়েছি। সেখানে গিয়ে আসলে দেখব সবকিছু। ভালোভাবে অনুশীলন করেছি। মাস তিনেক আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলাম। তখন কিছু জিনিস শিখেছি যে লাল বলে কিছু চ্যানেল মেনটেইন করে বল করা লাগে। সেখানে যে ভুলগুলো করেছিলাম সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা করেছি এখন।’
ইনসুইং-আউটসুইং নিয়েও কাজ করেছেন এনামুল হক, ‘আমি দীর্ঘদিন তালহা জুবায়ের স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। এই সময়ে সুইং ও জায়গা মতো বোলিংয়ের কাজ করেছি। বেশি কাজ হয়েছে আউটসুইং নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে ভালো সুইং করাতে পারতেছি দু’দিকেই। আমি অতিরিক্ত চাপ নিতে চাই না। ম্যাচ বাই ম্যাচ চেষ্টা করতে চাই, এটা আমার জন্য একটা সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশে অথবা যেখানে হোক প্রতিটা ম্যাচ আমার জন্য একটা সুযোগ। আমার কাজ পারফর্ম করা, প্রতিম্যাচে সেটাই করব। জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পাওয়া বা না পাওয়া সেটা ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার।’
এমকে/টিএ