বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ৫০তম বার্ষিকীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ‘নির্দেশনা’ অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে বলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, তিনি পুলিশকে কোন নির্দেশনা দেননি। কয়েকদিন আগে ১৫ অগাস্টে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কিছু কথা বলেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্য ধরে পরে শুক্রবার বিকেলে ধানমণ্ডি থানার ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ‘ভুল’ করে প্রেস সচিবের প্রসঙ্গটি টেনেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শুক্রবার ৩২ নম্বর সড়কে বেশ কয়েকজন মারধর ও হেনস্তার শিকার হন।
সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও হামলাকারীদের ঠেকাতে দেখা যায়নি; কাউকে মারধর করে তুলে দেওয়া হলে পুলিশ তাকে নিয়ে যাচ্ছে।
হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে এক রিকশাচালকও রয়েছেন। তিনি বেলা ১১টার দিকে আসেন ফুলের তোড়া নিয়ে, যার ওপর কাগজে লেখা ছিল ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’।
সে সময় ঘটনাস্থলে সাদা পোশাকে থাকা ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, ৩২ নম্বরে নাশকতার পরিকল্পনার কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই।
“সরকারিভাবে যেহেতু তাদের (আওয়ামী লীগ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আমরা সেই নির্দেশনা ফলো করব।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দেওয়া ‘নির্দেশনা’ পুলিশ অনুসরণ করছে দাবি করে ওসি বলেন, “আপনারা হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন, কিছুদিন আগে আমাদের যে প্রেস সচিব, তিনি কিছু ইন্সট্রাকশন্স দিয়েছিলেন। সেই ইন্সট্রাকশন্স মোতাবেক আমরা কাজ করব।”
শফিকুল আলম বলেন, “না, পুলিশ তো ইন্সট্রাকশন পায় তাদের চিফের কাছ থেকে। আমরা তো আমাদের তরফ থেকে কোনো ইন্সট্রাকশন দিই না। পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মতো করে কাজ করে।”
তিনি বলেন, “আমাকে কয়দিন আগে সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ‘আওয়ামী লীগ যদি ১৫ অগাস্টে কর্মসূচি পালন করে সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন’। আমরা বলেছি যে, আওয়ামী লীগের অ্যাক্টিভিটিজ ব্যান। ফলে আওয়ামী লীগ ১৫ অগাস্ট বা যে কোনো সময় যদি মিটিং মিছিল করে তাহলে অবশ্যই সেটা ব্যান অর্গানাইজেশনের অ্যাগেইনস্টে যে বিধি সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা ১৫ অগাস্টেও যেরকম, সেটা অন্যান্য দিনেও সেরকম। এটা একজন সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তার জবাবে আমি এটা বলেছিলাম।”
আপনি তাহলে পুলিশকে আলাদাভাবে কোনো নির্দেশনা দেননি, এ প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, “ওটা তো আমার ডিপার্টমেন্ট না রে ভাই। ওনাদেরকে আমি ইন্সট্রাকশন দেব কেন। পুলিশ এর হোম মিনিস্ট্রি আছে, আইজিপি আছে, ডিএমপি কমিশনার আছে। সে তার লাইন অব ডিউটি অনুযায়ী ইন্সট্রাকশন পাবে, সেটা আমি দেব কেন। আমার তো রুলস অব বিজনেসেও এটা পড়ে না। সরকারের রুলস অব বিজনেসে কী এটা পড়ে যে আমি পুলিশকে বলবো যে, আপনারা এটা করেন।”
এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ১০ অগাস্ট ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, “বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি দুঃখজনক। তবে এ দিনটি আগস্টের অন্য ৩১ দিনের মতোই। কেউ ধানমন্ডিতে বা কোথাও কর্মসূচি করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রেস সচিব পুলিশকে কোন নির্দেশনা দেননি বলে জানানোর পর বিকালে ধানমন্ডি থানার ওসির সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের ওপরে নির্দেশনা আছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিরোধ। সেটা বলতে গিয়ে মুখ ফসকে ওটা বের হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “এটা আমার ভুল হয়ে গেছে। এটা আমি এক্সপাঞ্জ করছি। এটা নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। আমি খুবই বিব্রত।”
পুলিশের কাছে প্রেস সচিবের কোনো নির্দেশনা আদৌ আছে কিনা জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “প্রেস সচিবের নির্দেশনা কেন থাকবে। আমরা কি লাইন ছাড়া কাজ করব। আমরা কমিশনার স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব। আর প্রেস সচিবের নির্দেশনা পালনের কোনো সুযোগ নেই। থাকলেও এটা পুলিশ কমিশনার হয়ে আসবে। আইজিপি স্যারের হয়ে আসবে।”
এমআর/টিকে