যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এমন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাব দিয়েছে, যা ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মতো হলেও আলাদা। ইতালির প্রধানমন্ত্রী ও এক কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে শনিবার হওয়া এক ফোনালাপে এই প্রস্তাবটি এসেছে।
গোপনীয়তার শর্তে সূত্রটি আরো জানায়, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে মার্কিন পক্ষ ন্যাটোর অনুরূপ অনুচ্ছেদ-৫ ধাঁচের নিশ্চয়তার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনও সম্মত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ন্যাটোর যৌথ নিরাপত্তা গোষ্ঠীটির অনুচ্ছেদ ৫-এর নীতির ওপর ভিত্তি করে, যেখানে বলা হয়েছে, কোনো এক সদস্য রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে পুরো জোট তার প্রতিরক্ষায় নামবে।
ট্রাম্প তার ও পুতিনের শুক্রবার আলাস্কায় অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে শনিবার সকালে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যার মধ্যে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটও ছিলেন। এই যৌথ ফোনালাপের আগে ট্রাম্প আলাস্কা থেকে ফেরার পথে জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদা ফোনালাপও করেন।
সূত্রটি আরো জানায়, মার্কিন পক্ষ এই প্রস্তাব প্রথমে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপচারিতায় তোলে এবং পরে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথ আলোচনায় আবারও উত্থাপন করে।
বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আরেকটি সূত্রও নিশ্চিত করেছে, ন্যাটো-সদৃশ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সেই সূত্রটি বলেছে, ‘কেউ জানে না এটি কিভাবে কার্যকর হতে পারে এবং কেন পুতিন এতে সম্মত হবেন, যেখানে তিনি ন্যাটোর ঘোরতর বিরোধী এবং স্পষ্টতই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের কার্যকর নিশ্চয়তার বিরোধিতা করেন।’
এ ছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে থাকা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, নিশ্চিত করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনুচ্ছেদ-৫ ‘অনুপ্রাণিত’ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ধারণা উত্থাপন করেছেন, যা তিনিও কয়েক মাস ধরে সমর্থন করে আসছেন।
মেলোনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রস্তাবের সূচনা বিন্দু ছিল একটি যৌথ নিরাপত্তা ধারা সংজ্ঞায়িত করা, যা ‘ইউক্রেনকে তার সব অংশীদারের সমর্থন পাওয়ার সুযোগ দেবে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও থাকবে, যারা পুনরায় কোনো হামলার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে প্রস্তুত থাকবে।’
এর আগে মার্চ মাসে মেলোনি ইতালীয় সিনেটরদের জানিয়েছিলেন, এমন কোনো প্রতিক্রিয়া মানেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়। তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এ বল প্রয়োগের বিকল্প রয়েছে, ‘কিন্তু এটি একমাত্র সম্ভব বিকল্প নয়।’
তবে মেলোনির বিবৃতিতে উল্লেখ ছিল না যে এই ধারণাটি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে কিনা।
কিয়েভ দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু রাশিয়া এটিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছে এবং পশ্চিমাবিশ্বের কিছু অংশ থেকেও এ ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্পও বারবার স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেন পশ্চিমা সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে না।
এদিকে জেলেনস্কি সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে পৌঁছনোর কথা রয়েছে। দ্বিতীয় সূত্রটি এএফপিকে জানিয়েছে, জেলেনস্কি সেখানে সম্ভাব্য ট্রাম্প-পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের রূপ, শান্তি আলোচনায় কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের ভূমিকা, ভূখণ্ডগত প্রশ্ন ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করবেন।
এমআর/টিকে