দীর্ঘদিন থকেই তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হচ্ছিল। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময়ই তাকে কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে তুলনা করে ‘বেবি এবি’ ডাকা শুরু হয়। ২০২৩ সালে জাতীয় দলেও অভিষেক হয়ে যায় দেভাল্ড ব্রেভিসের। কিন্তু আলো ছড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় বাদও পড়ে যান। সেই ব্রেভিস দুই বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন দুর্দান্ত এক ব্যাটার হয়ে। দিনকয়েক আগে বনে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে কনিষ্ঠতম সেঞ্চুরিয়ান।
দেভাল্ড ব্রেভিস যে নিজের দিনে দুনিয়ার সেরা বোলিং আক্রমণও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারেন, তার প্রমাণ দিনকয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেই দিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে জশ হ্যাজেলউড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যাডাম জাম্পাদের পিটিয়ে হাঁকিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেলেও ব্রেভিস পেয়েছিলেন অর্ধশতকের দেখা।
২২ বছর বয়সী ব্রেভিসের ব্যাটিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড় ব্রেভিসের ‘বেবি এবি’ নামকে যথার্থই মনে করছেন। এই ট্যাগ যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি অনেক সময় চাপও তৈরি করে বলে সতর্ক করেছেন ম্যাক্সওয়েল।
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে এই অজি অলরাউন্ডার বলেন, ‘ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুতে ওর কাঁধে বেশ ভারী একটা বোঝা চাপানো হয়েছিল।
সম্ভবত খুব দ্রুতই তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার দলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সে ফিরে গিয়ে নিজের খেলা নিয়ে কাজ করেছে এবং এখন দারুণভাবে খেলছে। ওর ব্যাট সুইং খুবই নিখুঁত, একবার শুরু করলে থামানো কঠিন।’
২২ বছর বয়সী ব্রেভিসকে দীর্ঘদিন ধরেই এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময় থেকেই তার কাঁধে ‘বেবি এবি’ ডাকনামটা জড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে তিনি বিশ্বজুড়ে নজর কাড়ছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে তিনি মাত্র ৫৬ বলে খেলেন অপরাজিত ১২৫ রানের ইনিংস, যাতে ছিল ১২টি চার ও ৮টি ছয়। ২২৩ স্ট্রাইক রেটে খেলা তার ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে ২১৮ রান তুলতে সাহায্য করে এবং ৫৩ রানের জয় এনে দেয়। এই ইনিংসের সুবাদে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে তিনি এক লাফে ৮০ ধাপ এগিয়ে ২১তম স্থানে পৌঁছান, অর্জন করেন ক্যারিয়ার সেরা ৬১৪ রেটিং পয়েন্ট।
ব্রেভিসের টি-টোয়েন্টি সুনাম আরও পোক্ত হয় আইপিএল ২০২৫ আসরে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে কঠিন সময় কাটানোর পর তিনি ২.২ কোটি রুপিতে চেন্নাই সুপার কিংসে (সিএসকে) ইনজুরি রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যোগ দেন । সেখানে ৬ ম্যাচে ২২৫ রান করেন ১৮০ স্ট্রাইক রেটে, যার মধ্যে ছিল দুটি অর্ধশতক, যা তার বিস্ফোরক ব্যাটিং সামর্থ্যের।
এখন পর্যন্ত ব্রেভিস দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২টি টেস্ট ও ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। উত্থান পর্বে এবার ব্রেভিস ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেকের অপেক্ষায়। আর সে জন্য আর খুব একটা অপেক্ষাও করতে হচ্ছে না তাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজেই এই ২২ বছর বয়সীর অভিষেকের ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
অভিজ্ঞ ডেভিড মিলারের অনুপস্থিতিতে তার জায়গায় আগামী মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) কেয়ার্নসে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে দিয়ে অভিষেক হতে পারে ব্রেভিসের। মিডল অর্ডারে ত্রিস্তান স্ট্যাবস ও উইয়ান মুল্ডারের সঙ্গী হতে পারেন এই ২২ বছর বয়সী।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাভুমা বলেন, ‘তরুণদের দেখতে পাওয়াটা সবসময় রোমাঞ্চকর। অবশ্যই এখন সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ব্রেভিস। সে নিজেকে প্রমাণ করছে এবং দেখাচ্ছে যে সে কী করতে সক্ষম। আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত যে ওয়ানডে ফরম্যাটেও সে কী নিয়ে আসতে পারে, তা দেখার জন্য।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওপেনিংয়ে সহ-অধিনায়ক এইডেন মার্করামের সঙ্গী হতে পারেন রায়ান রিকেলটন। এরপর বাভুমা, স্ট্যাবস, ব্রেভিস এবং মুল্ডার। সাত নম্বরে থাকছেন করবিন বশ। এই সিরিজ দিয়ে ফিরছেন কেশভ মহারাজ, যিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে শেষবার খেলেছেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারার পর এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ওয়ানডে সিরিজ।
এমআর/টিকে