যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা প্রার্থীদের ‘আমেরিকা বিরোধী মনোভাব’ যাচাই হবে

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা কাজের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিদের এখন থেকে ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাব’ খতিয়ে দেখা হবে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেদনকারীর কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার বিষয়টিও রয়েছে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দিয়েছে। বিধিনিষেধের এই কড়াকড়ি অভিবাসনবিষয়ক অধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার (ইউএসসিআইএস) হালনাগাদ নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা এখন আবেদনকারীদের ‘আমেরিকাবিরোধী কর্মকাণ্ড বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা’ বা ‘ইহুদিবিদ্বেষী কার্যকলাপের কোনো প্রমাণ’ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পারবেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিবাসনের আবেদন পরীক্ষা–নিরীক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাই-বাছাইয়ের নিয়ম ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ইতিমধ্যে জুন মাসে চালু করা হয়েছিল। এটি এখন আরো বিস্তৃত করে ‘আমেরিকাবিরোধী কার্যকলাপের’ অনুসন্ধানের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিমালা কঠোর করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ পদক্ষেপ।

এ ধরনের অনেক নতুন পদক্ষেপে অভিবাসী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একজন কর্মকর্তা সোমবার জানিয়েছেন, এ বছর ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর গত জুনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনকারীদের ‘আমাদের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর প্রতি বিরূপ মনোভাব’ আছে কি না, তা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে যাচাই করে দেখতে হবে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএসসিআইএসের মুখপাত্র ম্যাথু ট্র্যাজেসার বলেন, যারা এই দেশকে ঘৃণার চোখে দেখে এবং আমেরিকাবিরোধী মতাদর্শ প্রচার করে, তাদেরকে আমেরিকার সুবিধা দেওয়া উচিত নয়।

ম্যাথু ট্র্যাজেসার আরো বলেন, আমেরিকাবিরোধী মনোভাব নির্মূল করতে নীতিমালা ও পদ্ধতি বাস্তবায়নে অভিবাসন সংস্থা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যত দূর সম্ভব পূর্ণ মাত্রায় কঠোর পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করে।

হালনাগাদ নীতিমালায় ‘আমেরিকাবিরোধী মনোভাবের’ কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, এর মধ্যে তারাই অন্তর্ভুক্ত, যারা ‘ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসবাদ, ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী সংগঠন এবং ইহুদিবিদ্বেষী মতাদর্শ’ সমর্থন করে।

তবে এতে ‘আমেরিকাবিরোধী’ মতাদর্শের উদাহরণ হিসেবে ১৯৫২ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের (আইএনএ) একটি ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একে অভিবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামগ্রিক আইনি কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই ধারায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব প্রাপ্তি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য; যারা ‘বৈশ্বিক কমিউনিজমের’ পক্ষে কথা বলেন; যারা ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মৌলিক ধারণার’ বিরোধিতা করে লেখালেখি করেন বা এ ধরনের জিনিসপত্র প্রচার করেন, অথবা যারা বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার মাধ্যমে মার্কিন সরকারকে উৎখাত করতে ইচ্ছুক।

এই ঘোষণা তাৎক্ষণিকভাবে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অনলাইন ফোরামগুলোতে বিতর্ক শুরু হয়েছে, ঠিক কোন বিষয়টি ‘আমেরিকাবিরোধী’ হিসেবে গণ্য হবে।
অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, অস্পষ্ট শব্দচয়ন এবং সুস্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় বাস্তবে হুমকি থাকুক বা না থাকুক, অভিবাসন কর্মকর্তারা অভিবাসনের বিষয়ে আরো কঠোর হওয়ার ক্ষমতা পাবেন।

অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন রেইচলিন-মেলনিক এক্সে এক পোস্টে লেখেন, অভিবাসন আইনে (আমেরিকাবিরোধী) পরিভাষাটি ব্যবহারের কোনো পূর্ব নজির নেই এবং এর সংজ্ঞা সম্পূর্ণভাবে ট্রাম্পের (প্রশাসনের) ওপর নির্ভরশীল।

অ্যারন আরো বলেন, এই পদক্ষেপ ম্যাকার্থিজমের কথা মনে করিয়ে দেয়, ১৯৫০-এর দশকের সেই সময়কাল ‘রেড স্কেয়ার’ নামেও পরিচিত। ওই সময় কমিউনিজম এবং আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এর প্রভাব নিয়ে জনমনে ব্যাপক আতঙ্কের সুযোগে বামপন্থীদের বিচারের মুখোমুখি করত সরকার।

ব্রিগহাম ইয়াং ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ইয়েনি লিলি লোপেজ একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তারা এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে গৎবাঁধা বিশ্বাস ও ধারণা এবং প্রচ্ছন্ন পক্ষপাতকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এটা সত্যিই উদ্বেগজনক।

এই সহযোগী অধ্যাপক আরো বলেন, এসব কিছুর মানে হলো আপনি আমাদের মানদণ্ড পূরণ করছেন, সেটা প্রমাণের জন্য আপনাকে আরো অনেক কাজ করতে হবে।

এফপি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান Aug 21, 2025
img
বান্দরবানে জিপ উল্টে একজন নিহত Aug 21, 2025
img
তিতাস গ্যাসের নামে প্রতারণা চক্র সক্রিয়, গ্রাহকদের সতর্কবার্তা Aug 21, 2025
img
সিলেটে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিলেন সারোয়ার আলম Aug 21, 2025
img
এনসিবির ভিডিওতে আলিয়ার বার্তা, “মাদককে না বলুন” Aug 21, 2025
img
দেশের ৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস Aug 21, 2025
img
বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেবেন না দীর্ঘদিনের পরিচালক মাহবুব আনাম Aug 21, 2025
img
ইতিহাসে আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সব ঘটনা Aug 21, 2025
img
সোনারগাঁয়ে কুখ্যাত ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেপ্তার Aug 21, 2025
img
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পৃথিবীর কেউ ঠেকাতে পারবে না : খোকন Aug 21, 2025
img
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩ Aug 21, 2025
img
আলাস্কায় কেন নগদ ৩ কোটি টাকা দিতে হয়েছে পুতিনকে Aug 21, 2025
img
জাকসু নির্বাচন: সেনা মোতায়েন চেয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি Aug 21, 2025
img
ভারতে নিজের রান্না নিজেই করে খাচ্ছেন কক্সবাজারের সাবেক এমপি Aug 21, 2025
img
মা বলতেন নোয়াখালী-বরিশালের ছেলেদের কাছে বিয়ে দেবে না: মুনমুন Aug 21, 2025
img
তেলবাহী ট্যাংকারে ভারতীয় জিরা ও ফেসওয়াশ সহ পণ্য জব্দ Aug 21, 2025
img
কৃত্রিম চোয়ালের হাড় তৈরি করল জাপানি গবেষকরা Aug 21, 2025
img
মায়ের ওষুধ কিনতে এসে আটক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা Aug 21, 2025
img
আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিং থেকে হঠাৎ উধাও কোহলি–রোহিত Aug 21, 2025
img
আগে ব্যাটিংয়ে অ্যান্টিগা, একাদশে আছেন সাকিব Aug 21, 2025