গাজা সিটি দখলে নিতে হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। দখলের প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গাজার জেইতুন ও জাবালিয়ায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার বাহিনী। হামলায় একদিনে ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ আরও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল। রয়েছে গাজা শহর দখলের পরিকল্পনাও।
গত বুধবার (২০ আগস্ট) এই পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য সময়সূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
গাজা সিটি দখল নিশ্চিত করতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা তলব করেছে। এর বাইরে ২০ হাজার সেনার দায়িত্বের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। পাঁচটি ডিভিশন এই অভিযানে অংশ নেবে।
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশের পরই অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে দখলদার বাহিনী। আল জাজিরা জানিয়েছে, জেইতুন ও সাবরায় বিরামহীন গোলাবর্ষণে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন।
যাদের মধ্যে শাতি শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ নিতে যাওয়া বেশ কয়েকজন ছিলেন। এদিন ইসরাইলি বোমা হামলায় একই পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দক্ষিণ গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবুতে হামলা চালানো হয়, যেখানে তিনজন নিহত হন।
এদিকে সেনা তলবের ঘোষণায় নিন্দার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। নতুন এই অভিযান দুই জাতিকে স্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে বলে সতর্ক করেছে ফ্রান্স ও জাতিসংঘ।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই অভিযান দুই জাতিকে স্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। জাতিসংঘ ও রেডক্রস সতর্ক করেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চল এরইমধ্যে অতিরিক্ত ভিড়ে বিপর্যস্ত, সেখানে আরও বাস্তুচ্যুতি হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসন শুরু করে দখলদার ইসরাইল। উপত্যকাটির হাজার হাজার নিরীহ বাসিন্দাকে হত্যা করা হচ্ছে। সব কটি সংযোগ করিডোর বন্ধ করে দিয়ে খাদ্য, জ্বালানি এমনকি চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভঙ্গুর করে দিয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনী।
ইসরাইলি বর্বরতার মাত্রা যতো বাড়ছে, ততো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইহুদিরা। বিভিন্ন দেশে হচ্ছে নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভ। এমনকি নিজ দেশেও তোপের মুখে পড়ছেন ইহুদি নেতারা।
সম্পর্কের সমীকরণ অনেকটাই বদলেছে পশ্চিমাদের সঙ্গেও। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত অন্যান্য দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইসরাইলের থেকে। আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন করে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা জানানোর পর বেড়েছে উত্তেজনা।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরাইলের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর টানাপোড়েন বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে নতুন করে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা জানানোর পর বেড়েছে উত্তেজনা। বিশেষ করে গাজায় আগ্রাসনের বিরোধীতা করছে খোদ ইসরাইলের কণ্ঠস্বর খ্যাত মিত্র দেশগুলো।
সম্প্রতি ব্রিটেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, মাল্টা ও অস্ট্রেলিয়া ঘোষনা দিয়েছে, তারা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি সম্প্রদায়কে পরিত্যাগের অভিযোগ তুলে তিনি আলবানিজকে দুর্বল রাজনীতিক আখ্যা দেন। এমনকি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স আর কানাডার নেতাদের সন্ত্রাসীদের পক্ষে দাঁড়ানোর অভিযোগও আনেন নেতানিয়াহু।
অন্যদিকে ইসরাইলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুর কূটনৈতিক অবস্থানকেই ব্যঙ্গ করেছেন। তার মতে, নেতানিয়াহুর কারণেই পশ্চিমাদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ইসরাইলের। তিনি নেতানিয়াহুকে বিষাক্ত রাজনীতিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
কেএন/এসএন