ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বড় আকারের সামরিক মহড়া চালালো ইরান।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া এ মহড়ার নাম দেয়া হয়েছে “সাসটেইনেবল পাওয়ার ১৪০৪”। এতে গালফ অব ওমান ও ভারত মহাসাগরে ইরানি নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অনুশীলন করা হয়েছে।
যদিও ইরানে এমন সামরিক মহড়া নিয়মিত হয়, তবে এবার মহড়ার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই যুদ্ধোত্তর সময়ে নিজেদের শক্তি ও প্রস্তুতি দেখাতেই এ মহড়া আয়োজন করেছে তেহরান।
ইরানি টেলিভিশন জানিয়েছে, মহড়ায় অংশ নেয়া নৌযানগুলো সমুদ্রে লক্ষ্যভেদে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহার করে পানিতে সামরিক সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে। তবে এখনো মহড়ার কোনো আনুষ্ঠানিক ভিডিও প্রচার করেনি রাষ্ট্রীয় টিভি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৮ হাজার সদস্য নিয়ে ইরানের নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি দক্ষিণের বান্দার আব্বাস শহরে অবস্থিত। এ বাহিনী সাধারণত গালফ অব ওমান, ভারত মহাসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরে টহল দেয়। তবে পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর মতো কৌশলগত এলাকা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড। পশ্চিমা দেশগুলোর জাহাজ আটকানো এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য এ গার্ডের নৌবাহিনী বিশেষভাবে পরিচিত।
মহড়ার প্রাক্কালে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে ঘোষণা দিয়েছেন, ইরান তাদের সেনাদের নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করেছে। তিনি বলেন, “কোনো শত্রুপক্ষ যদি অভিযানে নামে, আমাদের বাহিনী এসব নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে প্রস্তুত।”
এদিকে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে। দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অস্ত্রমান পর্যায়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ৩১ আগস্টের মধ্যে সন্তোষজনক সমাধান না হলে তারা জাতিসংঘে “স্ন্যাপব্যাক” প্রক্রিয়া চালু করবে। অর্থাৎ, ইরানের ওপর আগে প্রত্যাহার করা সব নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হবে।
ইরান ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ফের কার্যকর হলে দেশটির অর্থনীতি আরও গভীর সংকটে পড়বে। তবে তেহরান মনে করছে, মহড়ার মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে পেরেছে যে ভবিষ্যতে কোনো ইসরায়েলি বা পশ্চিমা হামলা হলে তার জবাব দিতে ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত।
টিকে/