এই সরকার জনগণের সঙ্গে নানাভাবে ধোঁকাবাজি করছে : শরীফুজ্জামান শরীফ

এই সরকার জনগণের সঙ্গে নানাভাবে ধোঁকাবাজি করছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরীফুজ্জামান শরীফ। তিনি বলেছেন, শহরের বাইরে এই সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। রাজশাহীতে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে, সিলেটে পাথর তুলে নিয়ে যাচ্ছে, ব্রহ্মপুত্রে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। যে যেখান থেকে পারছে লুটপাট করছে।

কিন্তু সরকার এসব বন্ধ করতে পারছে না। সরকার চাইলে কি বন্ধ করতে পারে না? অবশ্যই পারে। এটি শুধু অবহেলা নয়- অনেকাংশে এটা ইচ্ছাকৃত ব্যর্থতা বলেই মনে হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিয়ে শরীফুজ্জামান শরীফ এসব কথা বলেন।

শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘মাই টিভির টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধানকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে একই মামলার আসামি আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টার নামও রয়েছে। তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার পর এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। একটি রাষ্ট্র যখন দুর্নীতির প্রশ্নে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করে- একদিকে কিছু লোককে বিচারের মুখোমুখি করছে, অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রাখছে- তখন সেটা রাষ্ট্র পরিচালনায় দ্ব্যর্থতা ও অনৈতিকতা বোঝায়।

বর্তমানে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। ফোনালাপ, তথ্য-প্রমাণ ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। কিন্তু সরকার তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, “এই সরকার আসলেই আদৌ ‘সরকার’ হয়ে উঠেছে কি না। সরকারের ভেতরে একাধিক এজেন্ডা কাজ করছে এবং সেটার প্রমাণ আমরা বারবার পাচ্ছি।

আপনারা একটি ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক করছেন, কিছু গাইডলাইন ঠিক করছেন- হঠাৎ করে দেখা গেল, আপনি ছুটে গেলেন আমেরিকান দূতাবাসে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? কী প্রয়োজনে? আর কারা গেলেন সেখানে?

বাংলাদেশে তো অনেকগুলো দূতাবাস আছে, তাহলে আপনি অন্য কারো কাছে না গিয়ে হঠাৎ করে আমেরিকান দূতাবাসেই কেন গেলেন? যারা ঐকমত্যের কাউন্সিল বা আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও তো সেখানে ছিলেন। এটা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, সরকার অনেক দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, “এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে- এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো তারা তাদের সম্পদের হিসাব দিচ্ছেন না। অথচ এটি ছিল তাদের প্রথম দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি। তারা দিতে চাচ্ছেন না কারণ এই সময়ের মধ্যেই অনেকেই ‘একেবারে ইনোসেন্ট ভাব’ করে আঙুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছেন। তাদের সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ পেলে অনেক অপ্রিয় সত্য বেরিয়ে আসবে। তবে আমি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই- যারা দেড় দশক ধরে মনে করেছিল ‘আমাদের কেউ স্পর্শ করতে পারবে না, তারা আজ কোথায়? যারা এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন, ধান্দাবাজি করছেন- আপনারা যতই চেষ্টা করুন, এক সময় না এক সময়, তথ্য বেরিয়ে আসবেই। আমাদের এই জনপদের শিক্ষা হচ্ছে- মানুষ কখনো না কখনো জেগে ওঠে।”

তিনি মনে করেন, এই সরকার নিরপেক্ষ নয়। কখনো সরকার একদিকে হেলে পড়ে আবার কখনো আরেক দিকে। ফলে আমি সরকারের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি হিডেন পলিটিক্স (গোপন রাজনৈতিক কৌশল) দেখতে পাই। এই কারণে আমি এই সরকারকে সবসময় সন্দেহের চোখে দেখি।

শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, এখন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের সামনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। এরমধ্যে আইন-শৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হচ্ছে- এই সরকার সত্যিকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে নাকি ‘সিট ভাগাভাগি’র একটা চুক্তির পথে হাঁটবে? ইতিমধ্যেই নানা মহলে এই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে যারা নিয়ে এসেছিলেন, যারা তাকে এখানে বসিয়েছিলেন- তাদের প্রতি তিনি কোনো বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন কি না, এ নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

তিনি বলেন, সরকারের কিছু ধোঁয়াসাপূর্ণ আচরণ আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বলে আসছি- ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দেশবিরোধী চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তিগুলো সরকার যদি বাতিল নাও করতে পারে অন্তত সেগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করুক। দেখান যে আপনারা আগের সরকারের চেয়ে বেশি সাহসী এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু সরকার সেই কাজটাও করছে না। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অমীমাংসিত ইস্যুগুলো চেপে রাখা হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, সরকার নতুন নতুন সম্পর্ক গড়ে তুললেও পুরনো বিষয়গুলোকে সচেতনভাবে পেন্ডিং রেখে চলেছে।

তিনি মনে করেন, এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপনের ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক দৃঢ়তা দরকার কিংবা যে ন্যূনতম রাজনৈতিক সততা প্রয়োজন- তা সরকারের মধ্যে নেই। তারা মুখে এক কথা বলেন কিন্তু কাজে তার উল্টোটা করেন।

তিনি বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর আপনার এক উপদেষ্টা বলছেন, “আলুর দাম তো কম”। এটা কি কোনো উত্তর? এটা কি জনগণের সঙ্গে সরাসরি মশকরা নয়? এই কথাবার্তার মধ্যে সরকারপক্ষের যে মনোভাব- সেটা বদলায়নি। চেহারা বদলেছে, সাইনবোর্ড বদলেছে কিন্তু চরিত্র ও জনগণের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করল ইউনিসেফ Aug 25, 2025
img
খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল ৩ জনের Aug 25, 2025
img
রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু Aug 25, 2025
img
জুলাই অভ্যুত্থানের তরুণদের স্পিরিট কাজে লাগিয়ে দেশ গড়তে হবে : সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা Aug 25, 2025
img
রাশিয়া কাছ থেকে তেল কেনার নতুন যুক্তি দিলো ভারত Aug 25, 2025
img
ট্রাক্টরে কন্টেনারের ধাক্কায় উত্তরপ্রদেশে নিহত ৮, আহত ৪৫ Aug 25, 2025
img
ব্রাজিল দল ঘোষণার আগেই ইনজুরিতে নেইমার Aug 25, 2025
img
ইউক্রেনকে আর কখনোই আপসে বাধ্য করা যাবে না : জেলেনস্কি Aug 25, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সংযত থাকার আহ্বান জানালেন ওয়াসিম আকরাম Aug 25, 2025
img
ভিয়েতনামে ধেয়ে আসছে ঝড় কাজিকি, ৫ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ Aug 25, 2025
img
জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অষ্টম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Aug 25, 2025
img
ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬, আহত ৮৬ Aug 25, 2025
img
টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধে শাহজালাল বিমানবন্দরে উপদেষ্টার মতবিনিময় Aug 25, 2025
img
ঘুষ কেলেঙ্কারিতে চার্জশিটে নয়-ছয়, এসআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ Aug 25, 2025
img
রাজধানীতে পুলিশি অভিযানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিজানুর গ্রেফতার Aug 25, 2025
img
বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করল যুক্তরাষ্ট্র Aug 25, 2025
img
ইনজুরিতে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছিটকে গেলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার Aug 25, 2025
img
কারাগারে বিক্রমাসিংহে, মুখ খুললেন সাবেক ৩ প্রেসিডেন্ট Aug 25, 2025
img
আজ রোহিঙ্গা সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা Aug 25, 2025
img
তেলআবিবে প্রথমবার ক্লাস্টারযুক্ত প্রতিরক্ষা অস্ত্র পাঠালো হুতি Aug 25, 2025