যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের শহর বাল্টিমোরে সেনা পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে স্থানীয় গভর্নর ওয়েস মুরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে।
মেরিল্যান্ডের এই ডেমোক্র্যাট গভর্নর সম্প্রতি ট্রাম্পকে ওই শহরে একটি ‘সেফটি ওয়াক’-এ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সোমবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “যদি ওয়েস মুর সাহায্য চান, যেমন লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্যাভিন নিউসম চেয়েছিলেন, আমি ‘সেনা’ পাঠাব। যেমন ওয়াশিংটন ডিসিতে করা হয়েছে। দ্রুতই অপরাধ দমন করব।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মূলত ডেমোক্র্যাটশাসিত শহরগুলোতে অপরাধ দমনের নামে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাচ্ছেন। তবে সেনা মোতায়েনের এই পদক্ষেপকে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতার অপব্যবহার বলে সমালোচনা করেছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, আসন্ন সপ্তাহগুলোতে ১৯টি অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১ হাজার ৭০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে।
বিবিসি বলছে, গভর্নর মুর ট্রাম্পের কৌশলের বরাবরই সমালোচক। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য “একেবারেই বেখাপ্পা আর অজ্ঞতাপূর্ণ”। মুর বলেন, “তারা আমাদের রাস্তায় হাঁটেনি, আমাদের সমাজে আসেনি। তাই বারবার আমাদের নিয়ে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছে।”
রোববার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে বলেন, মুরের চিঠি ছিল “অভদ্র আর উসকানিমূলক”। তিনি লেখেন, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি চাই, তিনি আগে অপরাধ সমস্যা সমাধান করুন, তারপর আমি সেখানে ‘হাঁটতে’ যাব।”
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রায় ২ হাজার সেনা মোতায়েন করেছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অভিযান শুরুর পর থেকে শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। ওভাল অফিসে গত শুক্রবার এক ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে এখন “পুরোপুরি নিরাপত্তা” ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, “ডিসি ছিল নরক, এখন নিরাপদ।”
পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে, রাজধানীতে মোতায়েনকৃত সেনারা শুরুতে নিরস্ত্র থাকলেও এখন তাদের অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনও আইন প্রয়োগে অংশ নেয়নি, বরং স্থানীয় ল্যান্ডমার্কগুলোতে অবস্থান করছে।
ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অপরাধ সর্বোচ্চে পৌঁছানোর পর ২০২৪ সালে তা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামে। ২০২৫ সালের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী অপরাধ আরও কমছে। এ বছর এখন পর্যন্ত সহিংস অপরাধ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ এবং ছিনতাই ২৮ শতাংশ কমেছে।
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্ক ও শিকাগোতেও সেনা পাঠাতে পারেন। তবে ডেমোক্র্যাট নেতারা এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার বলেছেন, শিকাগোতে সেনা পাঠানোর হুমকি ক্ষমতার অপব্যবহার।
ডেমোক্র্যাট হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফ্রিজ বলেন, ট্রাম্পের বাল্টিমোর বা শিকাগোতে সেনা পাঠানোর কোনও আইনগত ক্ষমতা নেই। তিনি অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট অপরাধ কমে যাওয়ার বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।
জেফ্রিজ বলেন, বাল্টিমোরে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট ও শার স্কুলের এক জরিপে দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দা ফেডারেল অফিসার ও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন এবং স্থানীয় পুলিশ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
পিএ/টিকে