কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৮৭ জন শিশু। সেই হিসাবে প্রতিবছর এসব স্থানে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। স্থানীয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় নতুন করে ৩২ হাজার ৪১২ পরিবারের এক লাখ ২৪ হাজার ১২৮ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল সোমবার কক্সবাজারের ইনানী হোটেল বে ওয়াচে রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংলাপের উদ্বোধনীতে বছরে প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তথ্যে বলা হয়েছে, বছরে প্রায় ৩০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তথ্য পুরোপুরি হালনাগাদ করা হয়নি। সরকারি হিসাবের বাইরেও বহু রোহিঙ্গা রয়েছে।
তাদের নিবন্ধনও নেই। রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশেও রোঙ্গিরা বসতি গড়ে তুলেছে।
আরআরআরসি অফিসের সর্বশেষ তথ্যে উল্লেখ রয়েছে, শিবিরগুলোতে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৫০৭টি পরিবারের মধ্যে সর্বমোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৯। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সাড়ে ১২ লাখের বেশি।
রোহিঙ্গা নেতা দীল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, গত এক বছরে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার পাহাড়ি এলাকাসহ কক্সবাজার শহরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের তথ্যও নেই কোথাও।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রশাসনের প্রধান সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আট হাজার বনভূমিতে রয়েছে ৩৩টি ক্যাম্প। লাখ লাখ রোহিঙ্গা এমন ছোট পরিসরের জায়গায় গড়ে তোলা বস্তিতে কষ্টসাধ্য জীবন যাপন করছে। কিন্তু আমাদের কোনো উপায় নেই।
নতুন করে ক্যাম্প করা মোটেই সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, একে তো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই, দ্বিতীয়ত দিন দিন ক্যাম্পগুলোর ঘরে ঘরে বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা। মায়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ এবং নতুন করে জন্মগ্রহণকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য ও মাতৃত্ব নিয়ে কর্মরত এনজিওকর্মীরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা দম্পতিরা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি মোটেও পছন্দ করেন না। রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে এ বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করেও তেমন সাড়া পান না তাঁরা। পরিবার পদ্ধতি গ্রহণ করা দম্পতির সংখ্যা খুব কম। তদুপরি রোহিঙ্গাদের একটি অংশ একাধিক বিয়ে করেছে। প্রতি স্ত্রীর রয়েছে গড়ে সাত-আটজন শিশু। এমনকি কোনো কোনো পরিবারে ১৭-১৮ জন সদস্যও রয়েছে।
টিকে/