খাল দখলকারী ও ভূমিদস্যুদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, খাল দূষণ ও দখলের ঘটনায় সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের প্রাণবন্ত জলপথ হিসেবে পরিচিত শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে ভূমিদস্যু অনেক। শুভাঢ্যা খাল দখলকারী ভূমিদস্যুদের শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না, তাদের জেলখানায় পাঠাতে হবে। আইন ভাঙার পরিণাম দেখাতে না পারলে দখলচক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩১৭ কোটিতে আনা হয়েছে, অর্থ সাশ্রয় ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতেই এ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একসময় প্রাণবন্ত এই খাল বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল। স্থানীয় কৃষি, মৎস্যচাষ ও নৌপথে চলাচলের মূল ভরসা ছিল এ খাল। কিন্তু বিগত দুই দশকে দখল, ভরাট, অবৈধ স্থাপনা ও বর্জ্য ফেলার কারণে খালের প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষা ছাড়া অন্য সময় খালটি পরিণত হয় দুর্গন্ধময় নর্দমায়।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জনগণের টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বাস্তবায়নের ধরন পরিবর্তন ও অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দেওয়ায় খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, খাল পুনঃখননের ফলে বর্ষার পানি নিষ্কাশন, কৃষিজমির সেচ সুবিধা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিবেশের ভারসাম্য ফিরবে বলে আশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা একইসঙ্গে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, উদ্ধারকাজ যেন রাজনৈতিক প্রভাব বা আপসের মাধ্যমে ব্যাহত না হয়।
সাত কিলোমিটার দীর্ঘ শুভাঢ্যা খালটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজারে গিয়ে শেষ হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একসময় এই খালে নৌকা চলতো, মাছ ধরা হতো এবং কৃষিজমির সেচে ব্যবহৃত হতো পানি। দখল, ভরাট ও বর্জ্য ফেলার কারণে খালটি প্রায় নর্দমায় পরিণত হয়েছে।
খালটির পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকল্পে খাল খননের পাশাপাশি পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উদ্ধারকাজ যেন রাজনৈতিক প্রভাব বা আপসে ব্যাহত না হয়। আগানগর এলাকার হাসিবুর রহমান বলেন, এই খাল বাঁচানো মানে কেরানীগঞ্জকে বাঁচানো। আগের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, সেনাসদরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান, বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা।
ইএ/টিকে