বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপসহীন : মাসুদ কামাল

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, আমরা গত ১৫ বছর ধরে ‘বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী’- এ আওয়ামী বয়ান শুনে আসছি, সেই সময়ে এই বয়ানের বিপরীতে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ইমেজটা তুলে ধরার ক্ষেত্রে যে দুয়েকজন লোক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তার মধ্যে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান একজন এবং আমি নিজের ব্যক্তিগতভাবে উনার সঙ্গে বেশ কয়েকবার বসেছি, কথা বলেছি। মানুষকে যখন আপনি খুব ক্লোজলি দেখবেন, তখন তাকে আপনি চিনতে পারবেন। মানুষকে যখন কোনো অনুষ্ঠানে দেখেন, তখন তো সে আনুষ্ঠানিকভাবে আসে, প্রিপারেশন নিয়ে আসে। কিন্তু তার সঙ্গে যখন আপনার আটপৌরে ভঙ্গিতে কথা হয়, তখন আপনি বুঝতে পারবেন, লোকটা আসলে কেমন।

সেটা দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, এই অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান সাহেব জীবনে অন্য অনেককিছুর সঙ্গে আপস হয়তো করেছেন, হয়তো আগামীতেও করবেন, কিন্তু একটা ক্ষেত্রে উনি আপসহীন। সেটা হলো মুক্তিযুদ্ধ। উনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে উনি আপসহীন। একদম বিন্দুমাত্র কাউকে উনি ছাড়তেন না।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।

মাসুদ কামাল বলেন, আপসহীনতার কারণে উনি কী কী কথা বলেছেন, না বলেছেন- এগুলো নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। উনার বাসার সামনে মব তৈরি হয়েছে, কিন্তু উনি নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র নড়েননি- এটা আমরা সবাই দেখেছি-জেনেছি কারণ তিনি প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন। উনি যে জবাবটা দিয়েছেন, সেটা থেকে আমরা উনার অবস্থানটা আরো ক্লিয়ার হতে পারব যে উনি কি বলেছেন, কেন বলেছেন।

উনি এক জায়গায় বলেছেন, এই যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটল, শেখ হাসিনা উনি পালিয়ে গেলেন- এই সমস্ত ঘটনার পর তিনি (ফজলুর রহমান) বলছেন, এর কিছুদিন পরে আমরা দেখলাম যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম ইসলামী ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে নিয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করল জামায়াত-শিবিরই ছিল জুলাই আন্দোলনের মূল ভ্যানগার্ড। আমি সেদিনই প্রমাদ গুনলাম এবং আন্দোলনের সমস্ত বিজয়কে তারা নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করল। এই যে কথাটা বললেন, উনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাবলেন যে যদি এই আন্দোলনের ভ্যানগার্ড জামায়াত-শিবির হয়- উনি এটাকে মানতে রাজি হননি এবং উনার বক্তব্য হলো এ আন্দোলনের পটভূমি সবকিছু তো তৈরি করেছিল বিএনপি।

তিনি বলেন, ফজলুর রহমান সাহেব বলেন যে গত ১৫ বছর ধরে এদেশের মানুষের মধ্যে স্বৈরাচারবিরোধী মনোভাবকে ধীরে ধীরে তিলে তিলে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এই বীজ বপন করেছিল এবং সে চারা হিসেবে বৃক্ষ এবং সবকিছু চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল বিএনপি এবং শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই আন্দোলনটাই স্বৈরাচারের বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। এই সময় যদি সারজিস আলম বলেন যে আন্দোলনের ভ্যানগার্ড ছিল ছাত্রশিবির এবং জামায়াত।

তো সবার মতো যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা একজন মুক্তিযোদ্ধার, ফজলুর রহমান সাহেবের সেটাই হয়েছে এবং তারপর উনি বললেন যে অবাক দৃষ্টিতে সবাই দেখল ৭১-এর পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবির সদর্পে মাঠে হাজির হয়েছে এবং দাবি করছে সমস্ত আন্দোলনের ভ্যানগার্ড তারাই এবং শুধু একটা নির্বাচনের জন্য তারা আন্দোলন করেনি বরং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের মত দুঃসাহস তারা প্রদর্শন করতে লাগল এবং তারপর উনি এক জায়গায় বলেছেন, লিখিত জবাবে দিয়েছেন যে এরপর থেকে জামায়াত-শিবির এবং এনসিপি একসঙ্গে বলা শুরু করল, ১৯৪৭ হলো প্রথম স্বাধীনতা এবং ২০১৪ হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আর ১৯৭১ হলো ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝগড়া। যা-ই হোক এই যে বিষয়গুলো, এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। শেষে উনি স্বীকার করেছেন এক জায়গায়, উনি বলেছেন- আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর কথা বলা এবং প্রতিবাদ করাকে আমার পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। গত ছয় মাস ধরে এ ব্যাপারে আমি শত শত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে দুয়েকটা বক্তব্যে আমার কিছু ভুল-ত্রুটিও থাকতে পারে। কারণ আমি তো মানুষ।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্পের শুভেচ্ছা টেলর–কেলসকে, বাগদানের খবরে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন Aug 27, 2025
img
৮০ বছর পর আর্জেন্টিনায় মিলল নাৎসিদের লুট করা শিল্পকর্ম Aug 27, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিলে কবে থেকে কার্যকর হবে? : প্রধান বিচারপতি Aug 27, 2025
img
রুমমেটকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালাল গ্রেপ্তার Aug 27, 2025
img
তিন দফা দাবিতে আবারও শাহবাগ অবরোধ বুয়েট শিক্ষার্থীদের Aug 27, 2025
img
মানালি হাইওয়েতে ভূমিধস, যান চলাচল বন্ধ Aug 27, 2025
‘মটু’ মন্তব্যে সাড়া, ওজন কমিয়ে সাবলীল অপু! Aug 27, 2025
img
ঢাবির হল সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ১০৩৫ জন, প্রত্যাহার ৭৩ ও বাতিল ১ Aug 27, 2025
img
হঠাৎ আইপিএল থেকে অবসর ঘোষণা অশ্বিনের Aug 27, 2025
img
ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক, বাংলাদেশ মেয়েদের ম্যাচ সম্প্রচারে অনিশ্চয়তা Aug 27, 2025
img
ডিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন Aug 27, 2025
img
ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণে দর্শক মহলে সাড়া ফেলেছে সুইফটের নতুন অ্যালবাম Aug 27, 2025
img
বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানবদেহে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন Aug 27, 2025
img
সমুদ্রবিলাসে গিয়ে সহকর্মীর সঙ্গে খুনসুটি পরীমনির Aug 27, 2025
img
‘বাঘি ৪’-এর আইটেম সং ‘আকেলি লাইলা’ তে সোনাম বাজওয়ার ঝলক Aug 27, 2025
img
ট্রাম্পের শুল্কে কঠিন হয়ে পড়েছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বাস্তবায়ন Aug 27, 2025
img
অভিনেত্রী হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় প্রেমিক রুফির বিচার শুরু Aug 27, 2025
img
রুমিন ফারহানা একাই যা করেছেন বিএনপির একশ নেতাও সেটা পারেননি: গোলাম মাওলা রনি Aug 27, 2025
img
কস্টিউম ডিজাইনারকে নিয়ে ফের আলোচনায় পরীমণি Aug 27, 2025
img
আবেগঘন বার্তা দিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক Aug 27, 2025