নভেম্বরের শেষ দিকে ঘরের মাঠে অ্যাশেজ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও মর্যাদাপূর্ণ দ্বৈরথ হিসেবে মনে করা হয় অ্যাশেজকে। গতবার ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্র করে ছাইদানি নিজেদের দখলে রেখেছে প্যাট কামিন্সের অজি ব্রিগেড। তবে, এবার শিরোপা ধরে রাখা আরও বড় চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করেন অজি পেস ব্যাটারির অন্যতম তারকা জশ হ্যাজেলউড। এবারে অস্ট্রেলিয়া সফরে আসা ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপকে তার ক্যারিয়ারে মোকাবেলা করা সবচেয়ে শক্তিশালী লাইনআপ মানছেন তিনি।
অ্যাশেজের জন্য প্রস্তুত হতে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের দুই স্তম্ভ–অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এবং মিচেল স্টার্ক সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেননি। তবে, নিয়মিত খেলার মধ্যে আছেন জশ হ্যাজেলউড। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ মিলিয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট শেষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অবশ্য বিশ্রামে ছিলেন। তবে আসন্ন সেপ্টেম্বরে এই পেসারের সামনে কোনো ম্যাচ নেই। তবে হ্যাজেলউডের চাওয়া দীর্ঘ সময়ের জন্য বিশ্রামে না গিয়ে পার্থে প্রথম টেস্টের আগে খেলার মধ্যে থাকতে। ।
৩৪ বছর বয়সী পেসারের আশা, নভেম্বরে অ্যাশেজের আগে শেফিল্ড শিল্ডে একটি ম্যাচ খেলতে পারবেন তিনি, যাতে ইংল্যান্ডের 'অবিশ্বাস্য' ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। ইংল্যান্ডের এবারের লাইনআপকে অস্ট্রেলিয়া সফরে আসা সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের স্বীকৃতি দিচ্ছেন তিনি।
হ্যাজেলউড বলেন, 'গত ১২ মাস ধরে আমি বুঝেছি যে আমার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো খেলা চালিয়ে যাওয়া, খুব বেশি সময় বোলিং ছাড়া না থাকা। কারণ আবার সেই ম্যাচের তীব্রতা ও ভলিউমে ফেরা আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব আমি যদি খেলার মধ্যেই থাকতে পারি, ম্যাচ ইন্টেনসিটিতে থাকতে পারি, সেটাই আমার জন্য সঠিক পথ।'
২০২৩ অ্যাশেজে চারটি টেস্ট খেলা হ্যাজলউড এবার ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপ থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জের আশা করছেন। সম্প্রতি ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ইংলিশরা শুধু আক্রমণ নয়, বরং আরও সূক্ষ্ম ব্যাটিংও দেখিয়েছে, যদিও ওভালে ছয় রানের হারে শেষ পর্যন্ত সিরিজ ড্র হয়েছে।
হ্যারি ব্রুক, যিনি বর্তমানে জো রুটের পর টেস্ট ব্যাটার র্যাঙ্কিংয়ে ২ নম্বরে, এবারই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে আসবেন। ২০২২ সালে এখানে খেলা নয়টি টি-টোয়েন্টিতে তার সর্বোচ্চ রান ছিল মাত্র ২০। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তার অভিজ্ঞতা সীমিত, শুধু ২০২১ সালে ইংল্যান্ড লায়ন্সের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে তিনি কেমন মানিয়ে নিতে পারেন, সেটাই তার দলের জন্য বড় ফ্যাক্টর হবে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে জো রুটের পারফরম্যান্স, যিনি এখনো অস্ট্রেলিয়ায় কোনো টেস্ট সেঞ্চুরি করতে পারেননি; আর সেখানে তার গড়ও মাত্র ৩৫.৬৮ (১৪ ম্যাচে)।
হ্যাজলউড বলেন, 'ইংল্যান্ডের উইকেটগুলো সম্প্রতি বেশ ফ্ল্যাট হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মও খুব শুষ্ক যাচ্ছে, তাই এখন ওখানে হয়তো বল ঘুরতেও শুরু করেছে। আমি মনে করি [ব্রুক] মানিয়ে নেবে। সে ভালো ব্যাটার, র্যাঙ্কিংয়ে এত উপরে থাকার কারণ আছে। তাই ও কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে।'
রুটকে নিয়ে এই পেসার বলেন, 'যখন সে প্রথমবার এলো, তখন আক্রমণটা ভিন্ন ছিল- মিচেল জনসন, রায়ান হ্যারিস, পিটার সিডল ছিল। গ্যাজ [নাথান লায়ন] তখনও ছিল, তবে আমরা সবাই সেই শক্তিশালী আক্রমণের সঙ্গে খেলতাম। আমি মনে করি নতুন মুখ যেমন ব্রুক হয়তো সহজ মনে করবে, তার পেছনে কোনো বোঝা নেই, সে স্বাধীনভাবে খেলতে পারবে। জোও তার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছে। তাই সত্যি বলতে ওদের ব্যাটিং লাইন-আপ অবিশ্বাস্য। শীর্ষ সাতজনই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে…এটা সত্যিই চ্যালেঞ্জ।'
হ্যাজেলউডকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এটি কি সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো ইংল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ? হ্যাজলউড বললেন. 'হ্যাঁ, অবশ্যই।'
অস্ট্রেলিয়ার সামনে অক্টোবরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আছে। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ভারতীয় দল দেশটিতে যাবে, তারপর শুরু হবে অ্যাশেজ। হ্যাজলউডের সূচি কীভাবে সাজানো হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। ১০ নভেম্বরের সূচিতে থাকা শেফিল্ড শিল্ডের চতুর্থ রাউন্ডে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার ম্যাচটি অ্যাশেজের একেবারে কাছাকাছি, তবে তিনি চান অন্তত একটি দীর্ঘ ফরম্যাটের ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি নিতে।
ইএ/টিকে