দলে সুযোগ পাওয়া বা বাদ পড়ার মধ্যে জীবনের সফলতা নির্ভর করে না: সোহান

প্রায় তিন বছরের বিরতি দিয়ে আবারও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন নুরুল হাসান সোহান। ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডস সিরিজ আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের এশিয়া কাপের দলে আছেন তিনি।
অনেক সংগ্রামের পর জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও আগের মতো আর উদ্দীপনা কাজ করে না বলেই জানিয়েছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। দলে সুযোগ পাওয়া কিংবা বাদ পড়ার মধ্যেও জীবনের সফলতা নির্ভর করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার লক্ষ্য এবার লাল সবুজ জার্সিতে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করা।

বয়স পেরিয়েছে ৩১। মাস তিনেক পর পূর্ণ হবে ৩২। অথচ এখনো জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি সোহান। ২০১৬ সালে অভিষেকের পর থেকে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিলেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে ওয়ানডে দলের বাইরে। আর টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন প্রায় তিন বছর আগে।

এরপর নিজেকে ঝালিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। পারফরম্যান্স করে গেছেন ধারাবাহিক। অনেক সংগ্রামের পর নির্বাচকদের নজরে পড়লেন, সুযোগ পেলেন দলে। নেদারল্যান্ডস সিরিজ ও এশিয়া কাপে যখন সোহানকে রেখে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়, তখন ‘এ’ দলের হয়ে টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছিলেন তিনি। সে সময় দলে সুযোগ পাবার খবর পেলেও নিজের মধ্যে খুব একটা উদ্দীপনা কাজ করেনি বলেই জানান তিনি। যেটা কয়েক বছর আগেও কাজ করতো।

গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোহান বলেন, ‘হ্যাঁ, ওই সময়টা শেষ (যখন দলে সুযোগ পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত হতাম) এবং দুই-তিন জন অভিনন্দন জানানোর পরও কোনো অনুভূতি কাজ করেনি।’
তার মতে, দলে সুযোগ পাওয়া কিংবা বাদ পড়ার মধ্যে জীবনের সফলতা নির্ভর করে না।

এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার বলেন, ‘আজকে দলে সুযোগ পাওয়া কিংবা পরের দিন দল থেকে বাদ পড়া... আসলে জীবনের সফলতা এসবের মধ্যে নির্ভর করে না। আমরা অনেক অধৈর্যশীল। আজকে যদি আমি ভালো খেলি, অনেক প্রশংসা হবে এবং অন্যদিন খারাপ খেললে সমালোচনা হবে। সুতরাং এটা আমাদের মধ্যে আলাদা কোনো অনুভূতি তৈরি করে না এবং আমি কোনো অনুভূতি প্রকাশ করতেও চাই না।’

সোহানের প্রধান লক্ষ্যেই এখন জাতীয় দলে নিজের জায়গা পোক্ত করা। গ্লোবাল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগসহ বেশ কিছু টুর্নামেন্ট খেলে এখন নিজেকে আগের চেয়ে বেশি পরিণত বলেই মনে করেন তিনি।

সোহান বলেন, ‘আমি প্রথমত স্থায়ী হতে চাই। জীবনে ভালো এবং খারাপ সময় আসবে, কিন্তু পারফর্ম করে দলে টিকে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবন স্থিতিশীল নয়। সত্যি বলতে বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে আমাদের জীবন স্থিতিশীল নয়। সুতরাং স্থিতিশীলতা পাওয়াটা কঠিন। যদিও এটাই জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রাত্যহিক জীবন কিংবা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটা বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন। আমার পারফর্ম করতে হবে। আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলেছি, আমাদের দেশের এবং অন্য দেশের মধ্যকার পার্থক্যটা জানি।’

ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে সোহানকে খেলতে হবে মিডল বা লোয়ার মিডল অর্ডারে। যেখানে সবসময়-ই চাপ থাকবে দ্রুত রান করার। তবে এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার বলছেন, তিনি এখন আর এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না।
সোহান বলেন, ‘মিডল অর্ডারের চাপ নেয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি এবং এখানে আপনি সব সময় সফল হবেন না। এটা কঠিন, একই সঙ্গে আপনার ২০-৩০ রান করা (যেটা কেউ খেয়াল করবে না) এবং আপনি একটি ম্যাচে ব্যর্থ হলে বাদ পড়ে যাওয়া। এটা স্বাভাবিক, অনেক আগে থেকেই মনে করা হয় আমরা রান করছি না এবং বর্তমানে আমি এটা নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছি।’

এদিকে তিন বছর বিরতির পর সোহানের টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটি পুরোপুরি সত্যে নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। বিশেষ করে ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও তাকে সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে লিপুকে দায়ী করেছিলেন।

বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে বিসিবির এ নির্বাচক বলেন, ‘এটা সত্যে নয় যে সোহান গত তিন বছর ধরে বিবেচনায় ছিল না। সে অনেক দিন ধরে আঙুলের ইনজুরিতে ভুগছিল। আর এখন যখন তাকে দলে টানা হলো, তখন অনেকে বলছেন তিন বছর পর সে দলে ফিরেছে। আমার মনে হয়, সবাই আঙুলের ইনজুরির কথা ভুলে গেছেন।’

আগামী ৩০ আগস্ট সিলেটে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সে ম্যাচ দিয়ে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় সোহান।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মাত্র ২৯ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের নতুন ডিসি জাহিদুল Nov 14, 2025
img
দুর্নীতির অভিযোগে ২ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন জেলেনস্কি Nov 14, 2025
img
আবার মঙ্গল অভিযানে নাসার দুই মহাকাশযান Nov 14, 2025
img
আজ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা, গণনা শুরু Nov 14, 2025
img
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ Nov 14, 2025
img
পোড়া জিনিস বারবার পুড়িয়ে কি আ. লীগকে দমানো যাবে : মোস্তফা ফিরোজ Nov 14, 2025
img
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, দ্বিতীয় ঢাকা Nov 14, 2025
img
মেঘনায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় দুই যুবক নিখোঁজ Nov 14, 2025
img
এনসিপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়ল Nov 14, 2025
img
ট্রাম্পের কাছে তথ্যচিত্রের জন্য ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি Nov 14, 2025
img
কুড়িগ্রামের নতুন ডিসি অন্নপূর্ণা দেবনাথ Nov 14, 2025
img
পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে, তাপমাত্রা নামলো ১৪ ডিগ্রিতে Nov 14, 2025
img
গাজায় ধ্বংস প্রায় ৩ লাখ বাড়ি, শীতে তাঁবুতেই আশ্রয় নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা Nov 14, 2025
img
রাজধানীতে হালকা শীতের আমেজ, সকাল শুরু ১৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায় Nov 14, 2025
img
ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো আরও ১৭ হাজার কোটি টাকা Nov 14, 2025
img
বরিশালে নতুন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি নিয়োগ Nov 14, 2025
img
সাতক্ষীরায় ২ চোরাই মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার ৩ Nov 14, 2025
img
প্রয়োজন ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে ৯ কোটি টাকার সেতু Nov 14, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজ দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Nov 14, 2025
img
রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয় : আনোয়ারুল Nov 14, 2025