রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন পেছানোর জন্য জামায়াত ও এনসিপি পরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন ইস্যু তুলছে। এসব দল বিচার, সংবিধান পরিবর্তন ও সংস্কারের নামে অযৌক্তিক দাবির তালিকা তুলে ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের এক সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
লন্ডনে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ আচরন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, জামায়াত এবং অন্য যেসব দল মনে করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন থেকে আসার পর নিরপেক্ষ আচরণ করছেন না। আমি মনে করি তাদের উচিত ড. ইউনূস সরকারের পদত্যাগ দাবি করা। কারণ যে সরকার নিরপেক্ষ না, সে সরকার ঠিকমতো নির্বাচন করবে না। এসব দল মনে করছে এই সরকার বিএনপির প্রতি ভায়াস। যেহেতু উনি লন্ডনে বসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। সেকারণে তার পদত্যাগ চাওয়া উচিত। আপনারা চলে যান।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এর বিকল্প যদি কেউ ভাবে তাহলে সেটি হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এই প্রশ্নের জবাবে জাহেদ উর রহমান বলেছেন, আমি একেবারেই তাই মনে করি। আসলে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেও হোক—এটা অনেকেই চায় না। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন—অর্থাৎ বিএনপির বাইরে উল্লেখযোগ্য কিছু দলের কথা ধরলে দেখা যায়, তারা সবাই বলে যে তারা নির্বাচন চায়। কিন্তু তারপরই দেখা যায় তাদের দাবির তালিকা বিশাল।
তারা বলে, সংস্কার করতে হবে, বিচার হতে হবে, বিচারের রোডম্যাপ দিতে হবে। আমি বা আপনি কি কখনো কোনো বিচারের জন্য রোডম্যাপ দিতে পারি? এটি একটি অবাস্তব এবং অযৌক্তিক দাবি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কিভাবে হবে। এছাড়া বলা হচ্ছে, নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে, এটা না হলে নির্বাচন হবে না। এছাড়া জুলাই সনদ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মানে হলো, আসলে নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা করতে চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে প্রত্যেকে তাদের ইস্যুগুলো তুলে ধরেছে। জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের কথাও বলেছে জামায়াত ও এনসিপি। নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে এই নির্বাচনকে যতটা সম্ভব পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন যদি এই নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না হয় তাহলে আমরা খুবই অস্থির অবস্থার দিকে চলে যাব। আমাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এখন হানাহানির পর্যায়ে, শত্রুতায় পরিণত হচ্ছে। যদি বাংলাদেশ এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পৌঁছায়, তাহলে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই সুযোগ নেবেন।
তিনি আরো বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে, ধানমন্ডিতে ককটেল পাঠিয়েছে। তারা এক ধাপ এগিয়েছে। এই ঘটনা ঘটবে যদি আমরা এগুলো করতে থাকি। নির্বাচনে যাব কি যাব না, এর একটা কারণ হতে পারে, আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ থাকবে না, তাহলে নির্বাচনে না যাওয়ার যুক্তি আছে।
জাহেদুর রহমান বলেন, কেউ কেউ বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর অধিকার নেই। কিন্তু নির্বাচন না যাওয়ার অধিকার তো আছে। একটি দল বলতেই পারে, ‘আমি নির্বাচনে যাব না’। তবে এই ক্রান্তিকালে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন যদি নির্বাচনে না যায়, তাহলে দেশ নৈরাজ্যের মুখে পড়বে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতায় প্রশ্ন উঠবে আর সেই দায় তাদেরকেই নিতে হবে।