ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার সর্ববৃহৎ নগরকেন্দ্র দখলের লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় একদিনেই অন্তত ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি, যাদের অনেকেই সাহায্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
এছাড়া গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আল-সাবরা মহল্লা। এটি গত কয়েকদিন ধরে টানা আক্রমণের শিকার হয়ে চলেছে। এদিন নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩২ জন ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া সাধারণ মানুষ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটি দখলের ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও তার এই ঘোষণা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, “গাজার মানুষ যেন খাঁচায় বন্দি হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। তারা যেখানে যায়, বোমা হামলা তাদের অনুসরণ করছে।”
তিনি আরও বলেন, খাদ্য ও সাহায্যের অবরোধে ক্ষুধায়ও মরছে মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা গেছে আরও ১৩ জন, ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে।
এছাড়া মঙ্গলবার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় পানির লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ড্রোন হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সাত শিশু ছিল। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল অনলাইনে শিশুদের রক্তাক্ত লাশ ও পানির পাত্রের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “পানি সংগ্রহ করতে দাঁড়ানো মানুষদের লক্ষ্য করে সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে— এটি নতুন এক হত্যাযজ্ঞ।”
গাজা সিটিতে আল-আফ পরিবারের বাড়িতে এক হামলায় ১০ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ বিষয়ে গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানায়, “এই অপরাধ ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রমাণ”। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করে এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার আল-মানারার রস্মি সালেম এবং ইমান আল-জামলি নিহত হন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ জনের বেশি।
এছাড়া মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে হাজার হাজার রিজার্ভ সদস্য ডাকা হয়েছে। সেনাপ্রধান এয়াল জামির জানান, “আমরা অভিযানে আরও গভীরে নিয়ে যাব।”
তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, ইতোমধ্যে ৩৬৫ সেনা এই ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকার করেছে।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানান, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজা দখলের পরিকল্পনা সবার জন্য হুমকি ডেকে আনবে, ইসরায়েলি বন্দিদের জন্যও।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের আসামি নেতানিয়াহু মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমরা হামাসকে পরাজিত করার জন্য লড়ছি।”
এমআর/এসএন