আফগানিস্তানে ফের ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২২০০

আফগানিস্তানে আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৬ দশমিক ২ মাত্রার এ ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস। মাত্র চার দিনের মধ্যে এটি ওই এলাকায় তৃতীয় বড় ভূমিকম্প।

রোববার প্রথম ভূমিকম্পে (৬ মাত্রা) দেশটিতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ হয়, যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওইদিন কুনার ও নানগারহার প্রদেশের বহু গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে যায়। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) আরও একবার ৫ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন আঘাত হানে, যা উদ্ধার তৎপরতাকে বিঘ্নিত করে।

হতাহতের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে

তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৫ জনে, আর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ হাজার ৬৪০ জন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কারণ অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।

ঘরহারা লাখো মানুষ, ত্রাণ সংকট তীব্র

সরকারি হিসাবে, ৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ৮৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্রিটিশভিত্তিক ইসলামিক রিলিফের জরিপে জানা গেছে, কুনারের কিছু গ্রামে প্রায় ৯৮ শতাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের জন্য চরম সংকট তৈরি হয়েছে। ডব্লিউএইচও বলছে, জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহে কমপক্ষে ৩০ লাখ ডলারের ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তাদের হাতে যে খাদ্য মজুত আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ চার সপ্তাহ চলা সম্ভব।
সহায়তা পৌঁছানো কঠিন

পর্বতময় দুর্গম এলাকায় উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। হেলিকপ্টার নামতে না পারা জায়গাগুলোতে প্যারাট্রুপার ও উদ্ধারকর্মীদের নামানো হচ্ছে। স্থানীয়রা নিজেরাই মাটি খুঁড়ে লাশ বের করছেন এবং বাঁশ-বেতের তৈরি খাটিয়ায় বহন করে সমাধিস্থ করছেন।

একের পর এক সংকটে ক্লান্ত আফগানিস্তান

ভূমিকম্পপ্রবণ হিন্দুকুশ পর্বতাঞ্চলে ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, যেখানে দারিদ্র্য, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও আন্তর্জাতিক সহায়তার সংকট চরমে—সেখানে এই দুর্যোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের কর্মকর্তা ইয়াকোপো কারিদি বলেন, ‘আফগানিস্তানকে বারবার একা ফেলে রাখা যাবে না। এই ভূমিকম্প আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, দেশটি একের পর এক সংকট মোকাবিলা করছে। এখনই কার্যকর আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।’

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে সালমানের মন্তব্য Sep 07, 2025
img
আরিয়ানের ওয়েব সিরিজে একসঙ্গে দেখা মিলবে বলিউডের তিন খান! Sep 07, 2025
img
আগামী নির্বাচনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের জন্য ঐতিহাসিক পরীক্ষা : আইজিপি বাহারুল আলম Sep 07, 2025
img
ইউক্রেনের মন্ত্রিসভার ভবনে রাশিয়ার হামলা Sep 07, 2025
img
আমি বিশ্বের সেরা পাঁচ স্ট্রাইকারের একজন : লাউতারো Sep 07, 2025
img

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের শপথ

‘গণরুম-গেস্টরুমের অপসংস্কৃতি ফিরতে দেবো না’ Sep 07, 2025
img
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই: কাদের সিদ্দিকী Sep 07, 2025
img
দেশে এসেছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা! Sep 07, 2025
img
শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী ছিলেন বদরুদ্দীন উমর Sep 07, 2025
img
আজকে দেশে থাকলে আমাকে ভিক্ষা করে খেতে হতো : আহমেদ শরীফ Sep 07, 2025
img

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র

জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে Sep 07, 2025
img
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় Sep 07, 2025
"শপথ করছি, কাউকে জোর করে রাজনীতিতে আনা হবে না" Sep 07, 2025
img
বদরুদ্দীন উমর আমৃত্যু জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে গেছেন : মির্জা ফখরুল Sep 07, 2025
বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্প-জিনপিং বৈঠকের সম্ভাবনা Sep 07, 2025
ট্রাম্পকে বিদায়ের দাবিতে ওয়াশিংটনের রাস্তায় হাজারো বিক্ষোভকারী Sep 07, 2025
img

অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মেঘমল্লার বসু

'যাকে খুশি ভোট দিন, তবে প্লিজ ভোট দিতে আসুন' Sep 07, 2025
img

বিবৃতিতে তারেক রহমান

‘বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এদেশের স্বাধীন বিবেকের এক প্রতীক’ Sep 07, 2025
img
জন্মদিনে ভাগ্নি সৃষ্টিকে ‘মা’ বলে রাজ চক্রবর্তীর আবেগঘন পোস্ট Sep 07, 2025
img
এশিয়ার সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের সাকিব! Sep 07, 2025