ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু )। যা দেশের দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে অভিহিত। ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো দেশই ভোটের ফলাফলের অপেক্ষায়।
দেশের অনেক তারকা ক্রীড়াবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের কেউ আজকের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন আবার কেউ দিতে পারেননি। জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার শেখ মোরসালিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষার্থী। ডাকসু নির্বাচনে ভোটার হলেও দেশের হয়ে খেলতে ভিয়েতনাম থাকায় ভোট দিতে পারেননি। তাই ভিয়েতনাম থেকে ঝরল তার দুঃখভরা কন্ঠ, 'খুব ইচ্ছে ছিল ডাকসুতে ভোট দেয়ার কিন্তু আন্তর্জাতিক খেলা পড়ে যাওয়ায় আর ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ ছিল না। ভোট দিতে না পারায় আফসোস লাগছে। তবে আজ গোল করেছি এবং তিনটি গোল করিয়ে দেশকে জিতিয়েছি এতে সেই আফসোস কিছু কমছে।’
জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম খেলোয়াড় তাওহিদ হৃদয়। তিনিও ডাকসু নির্বাচনে ভোটার হয়েছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এশিয়া কাপে খেলতে দুবাই থাকায় তারও ভোট দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অন্যতম তারকা ঋতুপর্ণা চাকমাসহ আরো কয়েকজন ফুটবলার ভুটানে লিগ খেলছেন। ফলে তাদেরও অনেকে ভোট দিতে পারেননি।
জাতীয় নারী দাবার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নোশিন আঞ্জুম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। নোশিন ঢাকায় থাকলেও ভোট দিতে যাননি, 'এখন জাতীয় দাবার বাছাই চলছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলা যা দুপুর থেকে শুরু হয়। সকালে অনুশীলন করায় আর ভোট দিতে যেতে পারিনি।’
নোশিনের ইন্সটিউটে সিনিয়র শিক্ষার্থী জাতীয় নারী টিটি চ্যাম্পিয়ন সাদিয়া রহমান মৌ। তিনি অবশ্য ভোট দিয়েছেন। প্রথমবার ভোট দিয়ে বেশ খুশি এই টিটি তারকা, 'বেশ সুন্দর পরিবেশে বন্ধুদের সঙ্গে ভোট দিলাম। এটাই আমার জীবনে প্রথম ভোট দেয়া। তাই একটু বাড়তি আনন্দ। ক্রীড়াবিদ হিসেবে ক্রীড়া সম্পাদকে যিনি জিতবেন তার কাছে প্রত্যাশা থাকবে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধূলা বিশেষ করে ইনডোর গেমসে ভালো কিছু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলার পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা যেন উন্নত হয়।’
মৌ বেশ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। টেবিল টেনিস ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অধিকার নিয়েও বেশ সোচ্চার। জাতীয় তারকা খেলোয়াড় হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে তার কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, 'আমি এখন দ্বিতীয় বর্ষে। টিটি খেলা এবং পড়াশোনা এই দু’টি কাজেই বেশ ব্যস্ত। এরপর আবার এই দায়িত্ব নিয়ে আসলে ভাবা হয়নি। সাংগঠনিক নেতৃত্ব আলাদা একটা যোগ্যতা। সামনে যদি আবার নির্বাচন হয় তখন ভেবে দেখা যেতে পারে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন অলিম্পিয়ান আরচ্যার দিয়া সিদ্দিকী। তিনি এখন আমেরিকায় প্রবাস জীবনযাপন করছেন। অনেক দূরে থাকলেও ডাকসু নিয়ে বেশ সরব তিনি। ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী জামির পক্ষে তিনি ফেসবুকে পোস্ট ও শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্তর-আশির দশকে খেলোয়াড় কোটা ছিল। পরবর্তীতে এই কোটায় অনিয়ম হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শুধু বিকেএসপি শিক্ষার্থী এবং ভর্তি পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট নাম্বারের ভিত্তিতে ভর্তির নিয়ম হওয়ায় অনেক ক্রীড়াবিদই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে পড়তে পারেননি। ২০২৩ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়দের সরাসরি ভর্তি করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এতে গত দুই-তিন শিক্ষাবর্ষে অনেক জাতীয় খেলোয়াড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন।
এসএস/এসএন