বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে জনগণ একটি নতুন শাসনব্যবস্থা চায়। তারা আর আগের কর্তৃত্ববাদী শাসনে ফিরে যেতে চায় না। এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে।
আজ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা নীরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির পরাজয় ঘটিয়েছে। দেশের মানুষ এখন সচেতন, তারা জানে কারা দেশের কল্যাণ চায় এবং কারা ক্ষতি করে। জনগণ এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটি নতুন জনকল্যাণমুখী বাংলাদেশ গঠনের জন্য।
অধ্যাপক পরওয়ার আরও বলেন, জনগণ আর ফ্যাসিবাদী শাসন চায় না। যারা খুন, গুম, ধর্ষণ, দখলদারিত্ব, মাস্তানি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী মতকে দমন করেছে— জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কারো পরিকল্পনা সফল হয় না। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো ছাত্রদের সম্মিলিত প্রতিবাদই একটি প্রতাপশালী সরকারের পতন ডেকে আনে।
পরওয়ার আরও বলেন, এখন দেশের মানুষ মত প্রকাশে আগের তুলনায় স্বাধীন, এ জন্যই তারা আগের সেই কর্তৃত্ববাদী শাসনকে আর ফিরিয়ে আনতে চায় না। বরং তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে— যে সংবিধানের সুযোগ নিয়ে একটি সরকার কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিল, সেই সংবিধানে ন্যূনতম সংশোধন এনে তবেই নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে আবারও যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হতে পারে।
জোর দিয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করে ‘প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পি.আর.) পদ্ধতিতে’ নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে জনগণের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নতুন, কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন- কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মুক্তার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমির গাজী সাইফুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান এবং ছাত্রশিবির খুলনা জেলা সভাপতি ইউসুফ ফকির।
ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মণ্ডল সভায় উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরদার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন সেখ, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শেখ মোসলেম উদ্দিন, জামায়াত নেতা ফরহাদ হোসেন, ছাত্রশিবির নেতা হুসাইন আহমদ, আবু তাহের, সামিদুল হাসান লিমন ও মফিজুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে সকাল ৮টায় স্বপ্না গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এবং ৯টায় চিংড়া ট্রলার ঘাটে পথসভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সকাল ১০টায় তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম শোভনা মাদরাসায় ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
মাদরাসা কমিটির সভাপতি নওশের আলী বাগতীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন- মুহতামিম মাওলানা মো. জাকারিয়া। বক্তব্য দেন আব্দুল হামিদ ও শেখ মোসলিম উদ্দিন।
একই দিন সোনা বিরাজ মুই মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত আরেক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ মোসলেম উদ্দিন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাইকেল মল্লিক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিক্ষক প্রসেন ঢালি। প্রধান অতিথি অধ্যাপক পরওয়ার কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
এদিন রাত ৮টায় ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নের পঠিয়াবান্ধা পূজামণ্ডপ চত্বরে হিন্দু কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। হিন্দু শাখার সভাপতি নারায়ণ মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন- হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসিত কুমার। বক্তব্য রাখেন- উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, ডা. আজিজুল হক, শেখ মো. আলাউদ্দিন, জামিরা ইউনিয়নের আমির মো. শরিফুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও শনিবার রাতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনায় চিকিৎসাধীন খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, মানবজমিনের সাংবাদিক গাজী মাকুল উদ্দিনের মাতা এবং ডুমুরিয়া উপজেলার সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামকে দেখতে যান। সেখানে তিনি তাদের খোঁজখবর নেন এবং দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা ও ছাত্রশিবির খুলনা জেলা সভাপতি ইউসুফ ফকির।
এমআর/এসএন