রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সেই মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ও তার সহযোগী গোলাম মোস্তফা আজাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আকতার মোর্শেদ আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টার মন্ত্রীপাড়া থেকে এনায়েতকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। ওইদিন বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক আজিজুল হাকিম।
তবে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন। পরে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় গত সোমবার সকালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রমনা মডেল থানার সন্ত্রাস বিরোধ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরবর্তীতে শুনানি শেষে আদালত তার ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী। তিনি ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় যান ও ২০০৪ সালে আমেরিকান পাসপোর্ট পান। গত ৬ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়ার্ক থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের বৈধ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্যদেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মিন্টো রোড মন্ত্রীপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক ঘুরতে থাকেন।
তাকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ তার গাড়ি থামায়। কেন এখানে ঘুরাঘরি করছেন জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি। এজন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় এবং তার কাছে থেকে দুটি আইফোন জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছেন এবং সেনাবাহিনীর সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন।
পরবর্তীতে তিনি রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করতে থাকেন। ইতোমধ্যে তিনি সরকারী উচ্চ ও নীতি নির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী মহলের সাথে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান।
গ্রেপ্তারকৃত এনায়েত আরো জানান, বর্তমান অন্তবার্তীকালীন সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার অসন্তুষ্ট। আগামী ২১ শে অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায় সরকার বাতিলের রায় রহিত করবেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। তখন সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুনভাবে জাতীয় সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশগ্রহণ করবেন এবং সরকার প্রধান কে হবেন তা বিশেষ একটি নির্ধারণ করে দিবেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠাতেন।
এসময় আসামিপক্ষে তার আইনজীবী ফারান মো. আরাফ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কেএন/টিএ