নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতুর নাম সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে নিমিষেই খসে পড়েন চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে।
ঢালিউডের ‘স্বপ্নের নায়ক’ সালমান শাহর ৫৪তম জন্মদিন শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর)। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা। অল্প কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটিয়ে দর্শক হৃদয়ে অমোচনীয় ছাপ রেখেছিলেন।
১৯৯৩ সালে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। প্রয়াত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত সিনেমাটি দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্কার করল এক নবাগত নায়কের অসাধারণ অভিনয়শৈলী। এমনি করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা প্রেক্ষাগৃহ মুখী হলেন, পরিচালকরা হলেন আস্বস্ত। এমনি করে সুদিন ফিরে আসে বাংলার চলচ্চিত্রে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অচেনা অজানা সালমানকে। বাংলা চলচ্চিত্রের ত্রাতা হয়ে একে একে উপহার দিলেন দুর্দান্ত ২৭টি সিনেমা।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে সালমান সবচেয়ে বেশি সিনেমা করেছেন শাবনূরের সঙ্গে। সালমান-শাবনূর জুটির রসায়নে মন ভরে গিয়েছিল দেশের সিনেমাপ্রেমীদের। ঢালিউডের অন্যতম জুটিতে পরিণত হন তারা।
সালমানের জন্মদিনে সহকর্মীরা যখন তাকে স্মরণ করলেন তখন শাবনূরও প্রিয় সহকর্মীকে নিয়ে জানালেন অনুভূতি। নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, শুভ জন্মদিন স্বপ্নের নায়ক। বাংলা চলচ্চিত্রের ধ্রুবতারা প্রয়াত সালমান শাহ এক অকৃত্রিম ভালোবাসার নাম, এক ইতিহাসের নাম। প্রিয় এই নায়ক এখনও আমাদের সবার হৃদয়ে, ভাবনায়, অনুভবে বেঁচে আছে - বেঁচে থাকবে চিরকাল। তার কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো আজও দর্শকদের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সালমান শাহ্ পরবর্তী সময়ে যারা চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার জন্য এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, সালমান শাহ-ই ছিলেন তাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস।
সবশেষে সালমান শাহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শাবনূর লিখেছেন, জন্মদিনে বরাবরের মতো পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি তোমাকে। আল্লাহপাক তোমায় জান্নাতবাসী করুন, আমিন।
সালমান শাহর প্রকৃত নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তিনি ছিলেন কমর উদ্দিন চৌধুরী ও নীলা চৌধুরীর সন্তান। অভিনয় জীবন শুরু করেন ছোটপর্দা থেকে। উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে ছিল ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’।
চলচ্চিত্রে সালমানের নামটি আজও জ্বলজ্বলে। কিন্তু এতকিছুর পরও তার নামে নেই কোনো শুটিং ফ্লোর অথবা রাস্তা। তার নামে এফডিসিতে নেই কোনো স্থাপনা। প্রয়াণের এত বছর পেরিয়েও সালমান শাহ তার ভক্তদের কাছে এখনো স্বতন্ত্র আলোয়ে মহীয়ান। মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারেই সালমান থেকে এতটা প্রাপ্তি সত্যি বিস্ময়ের ব্যাপার। তার হাত ধরেই বাণিজ্যিক সিনেমা পেয়েছিল ভিন্নমাত্রা। প্রথম সিনেমা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি চলচ্চিত্রেই দর্শক তাকে দেখতে পেয়েছেন নতুন থেকে নতুনত্বে; পরিপূর্ণ থেকে পরিণত রূপে। সালমান অভিনীত ২৭টি সিনেমার মধ্যে ২১টি তার জীবদ্দশায় মুক্তি পেয়েছিল আর বাকি ৬টি সিনেমা মুক্তি পায় মৃত্যুর পর।
এমকে/এসএন