সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাবেক বিএনপি নেতা লিটন হাওলাদারকে থানার ভেতরে খাট, তোষক, সিগারেট, মোবাইলসহ বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদ আলম। এমন কিছু ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাকে ক্লোজ (প্রত্যাহার) করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) তানভীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, একটি সিআর মামলায় এক বছর দুই মাস সাজাপ্রাপ্ত আসামি লিটন হাওলাদারকে (৪৮) গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদ আলম। তবে তাকে অন্যান্য আসামিদের থেকে আলাদাভাবে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থানার একটি কক্ষে রাখা হয়। পরের দিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে হাজতে বিশেষ সুবিধায় রাখা বেশ কিছু ছবি বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে গণমাধ্যমের হাতে চলে আসে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, লিটন হাওলাদার নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে থানার হাজতখানায় রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আর্থিক অনৈতিক সুবিধা নিয়ে হাজতের মধ্যেই ব্যারাক থেকে আনা খাট, তোষক ও বালিশের ভিআইপি বিছানা করে দেওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ফোনে কথা বলারও সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেখানে থাকা একটি খাটে তিনি আয়েশী ভঙ্গিতে সিগারেট হাতে নিয়ে বসে মুঠোফোনে কথা বলছেন। এমন অবস্থায় কোনো এক ব্যক্তি গোপনে তার ছবিগুলো মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে তাকে ক্লোজ (প্রত্যাহার) করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এর আগে, গোসাইরহাট থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদ আলম দাবি করেছিলেন, অন্য একটি মামলায় জামিন পেয়ে আসামি লিটন হাওলাদার দেখা করার জন্য থানায় আসেন। তবে তিনি অন্য একটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আসামি লিটন হাওলাদার নিজেকে অসুস্থতা দাবি করলে আমি তাকে হাজতখানায় থাকার কথা বলি।
হাজতখানায় আসামির জন্য বিছানার ব্যবস্থা ও মোবাইলে কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কে বা কারা করেছে আমার জানা নেই, কেউ এটা করে থাকলে অবশ্যই আমি খতিয়ে দেখবো। তবে মানুষ ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, ভুল ত্রুটি আমারও হতে পারে। আর আমাদের হাজতখানার পাশেই প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি কক্ষ রয়েছে। যেখানে অসুস্থ রোগীদের বিশেষ প্রয়োজনে রাখা হয়।
বিশেষ কোনো সুবিধা নিয়ে তিনি এ কাজ করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ব্যাপারটি অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন ওসি।
শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) তানভীর হোসেন বলেন, গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাকসুদ আলমকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউটি/টিএ