ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। জাতিসংঘে ভাষণের পর জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন চাইলে রাশিয়ার কাছ থেকে তার মূল ভূখণ্ড ফিরে পেতে পারে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইউক্রেন চাইলে “তার মূল ভূখণ্ড” ফিরে পেতে পারে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন। আর এটি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বিষয়ে তার অবস্থানে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে মঙ্গলবার তিনি লিখেছেন, ইউরোপ ও ন্যাটোর সহায়তায় ইউক্রেন “যেখান থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেখানকার মূল সীমান্ত” ফিরে পেতে পারে, কারণ রাশিয়ার অর্থনীতি চাপে রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পর নিউইয়র্কে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরই ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। মূলত ট্রাম্প সবসময় যুদ্ধ শেষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তবে আগে তিনি সতর্ক করেছিলেন যে এর জন্য ইউক্রেনকে হয়তো কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হবে। তবে জেলেনস্কি বরাবরই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নিজের পোস্টে ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ইউক্রেন “হয়তো এর চেয়েও বেশি কিছু পেতে পারে,” তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি। অবশ্য তিনি ক্রিমিয়ার কথা উল্লেখ করেননি। এই ভূখণ্ডটি ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করেছিল। আর ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে।
ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালোভাবে বোঝার পর তার অবস্থান বদলেছে। তিনি রাশিয়াকে “পেপার টাইগার” আখ্যা দিয়ে বলেন, “পুতিন ও রাশিয়া ভয়াবহ অর্থনৈতিক সমস্যায় রয়েছে। এখন ইউক্রেনেরই সময়।”
এদিকে ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তনকে জেলেনস্কি “বড় অগ্রগতি” হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। জাতিসংঘ ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। তবে কীভাবে তা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। সম্ভাব্য সহায়তার মধ্যে অস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ড্রোন থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের পোস্ট তাকে বিস্মিত করলেও তিনি এটিকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে নিয়েছেন। তার মতে, এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র “যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে থাকবে”। তিনি আরও বলেন, “পুতিন বারবার ট্রাম্পকে মিথ্যা বলেছে।”
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘে ভাষণের পর ট্রাম্প বলেন, ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর আকাশসীমায় রুশ যুদ্ধবিমান ঢুকলে সেগুলো গুলি করে নামানো উচিত। সম্প্রতি রুশ যুদ্ধবিমান ও ড্রোন একাধিকবার ন্যাটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
এর আগে ভাষণে ট্রাম্প সমালোচনা করেন যে কিছু ন্যাটো দেশ এখনো রুশ জ্বালানি কিনছে, যা দিয়ে তারা “নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে”।
এদিকে ট্রাম্পের মঙ্গলবারের পোস্টকে বিশ্লেষকরা নাটকীয় মোড় হিসেবে দেখছেন। এর আগে তিনি বারবার বলেছেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত আলোচনার সময় তিনি জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, “এখন তোমাদের হাতে জেতার মতো কার্ড নেই।”
গত আগস্টে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ফেরাতে চাইবেন, তবে “ভূখণ্ড বিনিময়ের” প্রয়োজন হতে পারে। তখন খবর আসে, তিনি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল পুরোপুরি রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন, যাতে পুতিন যুদ্ধবিরতি মেনে নেন।
অবশ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে কয়েকবার কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিলেও ট্রাম্প এখনো সেগুলো কার্যকর করেননি, এমনকি মস্কো তার নির্ধারিত সময়সীমা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করলেও কোনও পদক্ষেপ নেননি ট্রাম্প।
পিএ/এসএন