বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) নন-ক্যাডার বিধিমালা–২০২৩ অবশেষে সংশোধনের পথে এগিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এই সংশোধনী স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া। দীর্ঘদিন ধরে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় ছিল এ বিধিমালা।
গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে “বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটা আপডেট” শিরোনামে দেওয়া এক পোস্টে মিরাজ মিয়া বিষয়টি তুলে ধরেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটাতে এনসিপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিসিএস পরীক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে দলের দ্বারস্থ হন।
এরপর থেকেই দলীয়ভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ধাপে ধাপে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে, বিশেষ করে পিএসসির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নন-ক্যাডার বিধিমালা–২০২৩ সংশোধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত অনুমোদনের মুখ দেখেছে।
মিরাজ মিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১০ এপ্রিল এনসিপির তিন সদস্যের একটি দল পিএসসিকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। এতে চলমান বিসিএসগুলোর জট নিরসন, পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপির ৫ নম্বর দফায় বিশেষভাবে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, “ভাইভায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নিয়োগ নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের নন-ক্যাডার বিধি সংশোধন বা বাতিল করা।”
এ প্রস্তাবের মাধ্যমে এনসিপি স্পষ্ট করে জানায়, নন-ক্যাডার নিয়োগে অযথা জটিলতা সৃষ্টি হলে বহু প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এই বিধিমালার সংশোধন অপরিহার্য। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ সংশোধনীর স্বাক্ষরিত অনুমোদন পাওয়া গেছে।
ফেসবুক পোস্টে মিরাজ মিয়া আরও জানান, বর্তমানে ঝুলে থাকা ৪৪তম বিসিএসের পুনর্মূল্যায়ন বিধি দ্রুত প্রকাশের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় চার বছর ধরে এ বিসিএস প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত দুইবার মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “দীর্ঘসূত্রতা আর কাম্য নয়। আমাদের জানানো হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলেই এ বিসিএসের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”
বিসিএস পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বারবার। এ প্রসঙ্গে মিরাজ মিয়া জানান, এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে যাতে ৪৭তম বিসিএস থেকেই ভাইভার নম্বর ১০০ এর মধ্যে নির্ধারণ করা হয় এবং তা স্বচ্ছভাবে কার্যকর করা হয়।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া এবং ফয়সাল মাহমুদ শান্ত একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তিনজনই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে সমস্যার সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
তার পোস্টটি দেওয়া হলো-
দলটির ঘোষণাপত্রেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে—
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি, সুপারিশ ও স্বজনপ্রীতি পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
গ্রেডভিত্তিক সমন্বিত পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
মিরাজ মিয়া জোর দিয়ে বলেন, “আমরা আমাদের ইশতেহারের বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চাকরিপ্রত্যাশীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা সবসময় পাশে আছি।”
এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেকে এনসিপিকে ধন্যবাদ জানান এবং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর অবশেষে সমস্যার সমাধানের দিকে পদক্ষেপ নেওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে ভাইভা উত্তীর্ণ হলেও নিয়োগের জটিলতায় ভুগছিলেন, তারা এটিকে নিজেদের জন্য “স্বপ্ন পূরণের খবর” হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা বিসিএসকে ঘিরে ছাত্র-যুবসমাজের মধ্যে সবসময় তীব্র আগ্রহ ও প্রত্যাশা থাকে। সেই পরীক্ষার নন-ক্যাডার বিধিমালার সংশোধন শুধু নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন নয়, বরং এটি হতে পারে হাজারো তরুণের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এই সংশোধনী স্বাক্ষরিত হওয়ায় এখন কেবল বাস্তবায়নের অপেক্ষা। আর পরীক্ষার্থীরা তাকিয়ে আছেন সেই দিনের দিকে, যেদিন এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেবে।
এমকে/এসএন