সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সুযোগ কি আমরা হারাচ্ছি? আমাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এটা এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক বিক্ষোভের ধরন বদলেছে, যেখানে আলোচিত হয়েছে সহিংসতার বাড়বাড়ন্ত এবং সংলাপের অভাব। একদিকে যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ স্বীকৃত ও সমাদৃত, অন্যদিকে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তা যেন হারিয়ে যাচ্ছে।’
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) খালেদ মুহিউদ্দীনের ঠিকানায় টক শো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে আমরা বহুবার দেখেছি, বিদেশের মাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের ঘিরে বিরোধী পক্ষের অসংখ্য প্রতিবাদ হয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিউইর্য়কে বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। এনসিপি নেতা আখতারকে ডিম ছুড়ে মেরেছে। ডিম ছোড়া, জুতা ছোড়া বা বিক্ষোভের মধ্যে এমন ঘটনা তো আমরা অহরহ দেখি।
পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড এখন সন্ত্রাসী আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয় না বরং তা রাজনৈতিক ক্ষোভ প্রকাশের একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এনসিপি নেতাদের হেনস্তা করার সময় নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে কিছু সেনসিবল ব্যক্তিও ছিলেন, যারা বিশেষ করে নারীদের সম্মান রক্ষায় সচেতন ছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো শীর্ষ নেতা কাছে থাকা সত্ত্বেও কেউ অশোভন আচরণ করেনি, যদিও তারা পারত। অনেক কিছুতে উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।
’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসেছিলেন, তারা রাজনৈতিক ব্যক্তি আর যারা প্রতিবাদ করছেন, তাও রাজনৈতিক কর্মী। আমি এই প্রতিবাদের ধরন সমর্থন করছি না, তবে এটা কি একেবারে অস্বাভাবিক? বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের দৃশ্য তো দেখা যায়ই। তবে এখানকার প্রধান ব্যর্থতাটি হলো স্থানীয় বিএনপি এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ মাঠে সক্রিয় ছিল, কিন্তু বিএনপি-এনসিপি নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলেন? জ্যাকসন হাইটসে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ দেখা গেলেও এয়ারপোর্টে তেমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যারা গিয়েছিলেন, তাদের যাত্রাটি যেন এতিমের মতো—হেঁটে হেঁটে বের হয়েছেন।
’
মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ‘জামায়াতের নেতাকর্মীরা হয়তো আগে থেকে খবর পেয়ে দ্রুত তাদের নেতাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন, অন্যদের সঙ্গে তাল মেলাননি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কঠিন, তবে এটি সম্ভব। আর সে কারণেই জামায়াতের নেতাকে বের হওয়ার সময় দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, “বিরোধী পক্ষের গালাগালের মধ্যে ছিল ‘আপাকে মারিস না, আখতারকে মার, রাজাকারকে মার’, যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই প্রতিচ্ছবি। আমি ঘটনাটিকে সমর্থন করছি না, এটি না হলে ভালো হতো। বরং সবার উচিত ছিল, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের একত্রে স্বাগত জানানো, যা একটি ইতিবাচক বার্তা হতো। তবে এটা বলা যায়, এর চেয়ে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। একজন যদি আহত হতো, তবে আলোচনার মাত্রা আরো গুরুতর হতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্য এই ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, ঘটনার পর বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সবাই একযোগে নিন্দা জানিয়েছে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে। ফলে আওয়ামী লীগের লাভের বদলে ক্ষতি হয়েছে। সুশৃঙ্খল প্রতিবাদ করলে গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেত, কিন্তু এখন নিজের পায়ে কুড়াল মারার অবস্থা হয়েছে দলটির।’
ইএ/টিএ