'জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী এতো বেশি কেন' প্রশ্ন নাদিম মাহমুদের

জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা এতো বেশি কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন লেখক ও গবেষক ড. নাদিম মাহমুদ। তিনি বলেন, 'যখন যে সরকার থাকে, তখন তাদের কেন বিশাল বহর নিয়ে রাষ্ট্রীয় সফরে যেতে হয়, কেউ কি বলতে পারেন? শেখ হাসিনা থেকে ড. ইউনূস সবার দল এত বড় থাকে কেন? তাদের কাজ কি?' আজ বৃহস্পতিবার সকলে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি এই প্রশ্ন তোলেন।

নাদিম মাহমুদ লিখেছেন, গত বছর প্রধান উপদেষ্টা যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আসেন, তখন তার সফর উপলক্ষে চারিদিকে হৈচৈ শুরু হয়। জাতিসংঘে অধিবেশনে মাত্র সাতজন সফরসঙ্গী নিয়ে যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সফরসঙ্গী যখন শতাধিক তখন এই ৭ জনের খবর নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ ছিল। কিন্তু দিন শেষে জানা গেল সেটি ৭ নয়, ৫৭ জন কিংবা তার একটু বেশি। এবারও একই ধরনের টোপ দেওয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমগুলোতে জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে ৪ রাজনীতিবিদ নিয়ে যাচ্ছেন বলে ফলাও করা হল।

কিন্তু আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তালিকায় দেখলাম সেই সংখ্যাটা ১০০ এর বেশি। কি মর্মান্তিক খবর! যখন যে সরকার থাকে, তখন তাদের এই বিশাল বহর নিয়ে রাষ্ট্রীয় সফরে কেন যেতে হয়, কেউ বলতে পারেন? শেখ হাসিনা থেকে ড.ইউনূস, সবার দল এতটা বড় থাকে কেন? তাদের কাজ কি? 

তিনি বলেন, মেনে নিলাম সরকার প্রধান হিসেবে জাতিপুঞ্জের সদস্য হিসেবে ভাষণ দেবেন তিনি, খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক থাকবে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কয়েকজন থাকবে, প্রয়োজনে ২-৩ জন মন্ত্রী থাকবে। চুক্তি কিংবা অন্যান্য কাজের জন্য আরো কয়েকজন থাকবে। সেই সংখ্যাটি না হয় ২০/৩০ জন হলো।

কিন্তু সেটি যখন পাঁচগুণ হয়ে যায়, তখন এই রাষ্ট্রটাকে ভালোবাসার আর কোন শাসক থাকে না।

বিপুল এই সফরসঙ্গীদের জন্য কত খরচ হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলে এই গবেষক আরো বলেন, এই যে সফর সঙ্গীদের নিয়ে নিজে দেশের বিমান থাকার পরও 'ভিনদেশী' বিমানে চড়ে নিউইয়র্কে আসলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য খরচ কত পড়ল? সেখানে গিয়ে ১০ দিন পাঁচ তারকা হোটেলে থাকবে, তার খরচ কত? ধরুন একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে প্রতিজনের খরচ বর্তমান হিসেবে (সর্বনিম্ন) ৩০০০ হাজার ডলার হলে, পাঁচতারকা হোটেলে প্রতি রাত থাকার জন্য ৪০০ ডলার হলে, ১০ দিনে খরচ ৪০০০ হাজার ডলার। খাওয়া খরচ আরো ১০০০ হাজার ডলার। তাহলে জনপ্রতি খরচ পড়ল ৮০০০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন অতিথি সংখ্যা যদি ১০০ হয়, তাহলে সেটি প্রায় ১০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।

লেখার প্রসঙ্গে এটি স্রেফ একটি উদাহরণ মাত্র, সিরিয়াস কিছু নয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের হিসাবে এই টাকা হয়ত কিছুই না, কিন্তু আপনি যখন হিসেবে কষবেন, এই মানুষগুলোর সফরে ভূমিকা দেখবেন, তখন প্রশ্ন জাগবে আমাদের শাসকগোষ্ঠিরা দেশটাকে কতটা ভালোবাসে। তারা ইচ্ছা করলে, এই সফরসঙ্গীর তিনভাগই কমিয়ে ফেলতে পারতেন, কিন্তু তারা সেটা করবেন না। কারণ, টাকাটা যাবে আমাদের সাধারণ মানুষের পকেট থেকে।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম সফরসঙ্গী হওয়ার প্রসঙ্গে নাদিম মাহমুদ বলেন, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম গত বছর জাতিসংঘের সফরসঙ্গী ছিলেন, এবারও তালিকায় তার নাম দেখলাম।

তিনি কি রাষ্ট্রের কোন কাজে জড়িত? তিনি এখন পর্যন্ত সরকারের কোন কাজটি জনগণের জন্য করে দিয়েছেন? জাতিসংঘে গিয়ে তার ভূমিকাটি কি? এই প্রশ্ন কেউ তুলবে না। কারণ, আমরা জাতিগতভাবে বড্ড বায়াসড। রাষ্ট্রের জবাবদিহিতার জায়গায় কেউ স্বচ্ছ নয়। কারণ, জনগণের কাছে কৈফিয়ত দেয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানে রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার যখন নিজের কাছে প্রশ্ন করা সময় পান না, তখন আমাদেরকে প্রশ্ন করতে হয়। বলতে হয়, স্যার আগের সরকার তার পরিবারের সদস্যেদের সঙ্গী করত তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করত, আজ সেই মানুষগুলোই আপনার সঙ্গী বলে হয়ত, কেউ প্রশ্ন করে না, আপনার পরিবারের সদস্য 'জাতিসংঘের' সফরে গিয়ে কি করবেন? আমাদের এখন বলতে হয়, স্যার রাষ্ট্রীয় সফরে আর একটু আন্তরিক হলে ভাল হতো না?

তিনি আরো লিখেছেন, এই সরকারের এক উপদেষ্টা খুবই প্রশংসনীয় একটি কাজ করেছে। আগের সরকারের অনেক প্রকল্পের 'অতিরিক্ত' খরচগুলো তিনি ছাঁট করে দেশের উপকার করেছেন। কিন্তু আপনারা এই দলবল সাজিয়ে, আমেরিকায় গিয়ে সেই পুরাতন ব্যবস্থাকেই চর্চা করে গেলেন, যা বড়ই লজ্জার। নিজেরা যদি নিজেদের ভিতর পরিবর্তন না আনেন, তাহলে অন্যরা কীভাবে আনবে? জনগণ কেন আপনাদের এই বিশাল সফরসঙ্গীর অর্থ দেবে? নিজের পকেটের টাকায় মায়া থাকে, আর রাষ্ট্রের কোষাগারের অর্থের টাকায় কোন মায়া থাকতে নেই বুঝি?

শেষে তিনি লিখেছেন, জানি আপনারা আমাদের সমালোচনার ধার ধারেন না। লন্ডনে গিয়ে কয়েক কোটি টাকা হোটেল খরচ দিয়ে আসলেন, সমালোচনা হলো, কিন্তু আপনাদের বিবেকটি জাগ্রত হলো না। এটাই বাংলাদেশের দুঃখ। এখানে সবচেয়ে ভাল মানুষটিও নিজের বিবেকের কাছে বন্ধী থাকে না। কি আর করা, এটাই হয়ত বাংলাদেশের মানুষের নিয়তি।

এসএন 


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ক্যাচ মিসে শীর্ষে ভারত, ৮ম অবস্থানে বাংলাদেশ Sep 25, 2025
img
চীনা নেতৃত্বাধীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য জোটে যোগ দিতে চায় বাংলাদেশ Sep 25, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, প্রধান উপদেষ্টাও সহযোগিতা করছেন : মির্জা ফখরুল Sep 25, 2025
img
জাকেরের ক্যাচ মিসেই ম্যাচ হাতছাড়া বাংলাদেশের! Sep 25, 2025
img
৪ বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে : শফিকুল আলম Sep 25, 2025
img
শাপলা প্রতীকের ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সিরিয়াস : সারোয়ার তুষার Sep 25, 2025
img
ইরান কখনো অন্যায়ের সামনে মাথানত করবে না : মাসউদ পেজেশকিয়ান Sep 25, 2025
img
বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীর ৯৫% সম্পদ বিতরণের ঘোষণা Sep 25, 2025
img
সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি Sep 25, 2025
img
শিগগিরই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে বিএনপি: ডা. জাহিদ Sep 25, 2025
img
এস আলম ও তার ২ ভাইয়ের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির নির্দেশ Sep 25, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ Sep 25, 2025
img
ইইউর কমিশনারের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক Sep 25, 2025
img
পশ্চিম তীর দখলের চেষ্টা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘লাল রেখা’ অতিক্রম : ফ্রান্স Sep 25, 2025
img
প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ১৯৮ কোটি টাকা Sep 25, 2025
img
নিউ ইয়র্কে বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপ, কারণ জানালেন জামায়াত নেতা ডা. তাহের Sep 25, 2025
img
‘মহা জাদু’ গানে দর্শক মাতাবেন হাবিব ওয়াহিদ Sep 25, 2025
img
শেহবাজ ও আসিম মুনিরের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প Sep 25, 2025
img
আরিয়ানের সিরিজে ভাইরাল ববি দেওলের ২৮ বছর আগের গান Sep 25, 2025
img
কিউবায় প্রায় কোনো অটিজম নেই, দাবি ট্রাম্পের Sep 25, 2025