মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন, কিউবায় দারিদ্র্যের কারণে ‘প্রায় কোনো অটিজম নেই’। তবে কিউবার চিকিৎসকরা এই বক্তব্যকে ভুল ও ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘শোনা যায় কিউবায় এমনকি টাইলেনলও নেই, কারণ মানুষের কেনার সামর্থ্য নেই। আর ওখানে প্রায় কোনো অটিজম নেই।
বলুন তো, এটা কীভাবে সম্ভব?’
তিনি আরো বলেন, গর্ভাবস্থায় টাইলেনল সেবনের ফলে সন্তানের অটিজম হতে পারে। যা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের এই মন্তব্য এখন পর্যন্ত কিউবা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোও বিষয়টি প্রকাশ করেনি।
কিউবার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, দেশটিতে বহু বছর ধরে অটিজম শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অধীনে চালু রয়েছে বিশেষায়িত কেন্দ্র, যেখানে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরণের থেরাপি ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এমনকি বিদেশি নাগরিকদের জন্যও ডলফিনের সঙ্গে সাঁতারের মতো থেরাপি চালু রয়েছে—যা শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে নেওয়া সম্ভব।
কিউবার সরকারি ওয়েবসাইট-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শিশু চিকিৎসক ওসমারা ডেলগাদো সানচেজ বলেন, ‘প্রতিটি অটিস্টিক ব্যক্তি ভিন্ন। তাদের উন্নতির জন্য দরকার সহানুভূতি, বোঝাপড়া এবং পাশে থাকা।
’ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কিউবায় প্রতি ১০ হাজারে ০.৩৬ জনের মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কম হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংখ্যাটি বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত করে না, কারণ পর্যাপ্ত গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের অভাব রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১২৭ জনে একজন অটিজমে আক্রান্ত। সংস্থাটি জানিয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বহু দেশে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত না থাকায় প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, কিউবা সরকার অটিজম চিকিৎসাকে স্বাস্থ্যনীতির অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে।
ডেলগাদো জানান, বর্তমানে দেশজুড়ে সাতটি বিশেষায়িত কেন্দ্রে প্রায় ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী অটিজম আক্রান্তদের চিকিৎসা ও সহায়তায় নিয়োজিত। ২০১৮ সাল থেকে দেশটি নিজস্ব একটি অটিজম চিকিৎসা পদ্ধতিও তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ‘আরোগ্য’ শব্দটি ব্যবহার করি না। বরং প্রতিটি শিশুর সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করি, যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে।
সূত্র : সিএনএন।
এসএন