আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার দুপুরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন।
এর আগে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে চাইনিজ পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত ঝৌ পিংজিয়ানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল। একটি নির্বাচনমুখী দল। প্রতিনিধিদল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াত আমির বলেছেন, ‘সব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে এবং আমরা প্রত্যেক পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। আমরা ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান মর্যাদা এবং মানবিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকসহ সব অধিকারকে রক্ষা করে পথ চলি। আমির বলেছেন, দেশের জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন, তাহলে আমরা শাসক হবো না, আমরা সেবক হবো। সবাই সমতার ভিত্তিতে অধিকার ভোগ করবেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, বৈঠকে ’৭৫-এর পর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে জামায়াত আমির বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশ পরস্পর উন্নয়ন সহযোগী। আমরা একত্রে উভয় দেশের কী কী উন্নয়ন করতে পারি এবং বন্ধুত্বের চেয়ে প্রতিবেশীর ঘনিষ্ঠ ব্রাদারলি রিলেশনকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। অর্থনীতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর ওপর অকথ্য জুলুম-অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমাদের নেতাদের কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের অফিসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমাদের কষ্টের এই স্মৃতিগুলো আমির চীনের নেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার বিদায় নিয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেকে তারা থেমে থাকেনি। একটি দেশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি জানান, বর্তমান গ্লোবাল পরিস্থিতি ও পলিটিকস, গ্লোবাল সিকিউরিটিসহ নানা বিষয়ে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা জামায়াতে ইসলামী কীভাবে ভবিষ্যতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি এবং দুদেশের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা কীভাবে এগিয়ে নিতে পারি তা জামায়াত আমির তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিংব্যবস্থা একেবারে লুট হয়ে গেছে। দুর্নীতি, অর্থ পাচারে আমাদের অর্থনীতি একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেটা তিনি অতিথিদের সামনে তুলে ধরেছেন।
চীনা প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকাবিষয়ক বিভাগের পরিচালক (সিপিআইএফএ) ঝাও ইয়োংগুও, সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের (পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়) নির্বাহী উপপরিচালক ড. ওয়াং শু, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকাবিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা (সিপিআইএফএ) ঝাং লি, চীনা দূতাবাসের পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর ঝাং জিং এবং দূতাবাসের অ্যাটাচে লিউ হোংরু।
জামায়াত আমিরের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন এবং আমিরের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান।