মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগত নাগরিকত্ব সীমিত করার তার উদ্যোগের বৈধতা পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারা থেকে সরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ আটকে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগ দুটি আপিল দায়ের করেছে। অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার প্রথম দিনেই এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।
আপিলের নথিতে বিচার বিভাগ উল্লেখ করেছে, ‘নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তগুলো রাষ্ট্রপতি ও তার প্রশাসনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতিকে এমনভাবে বাতিল করেছে, যা আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তাকে দুর্বল করছে। এই সিদ্ধান্তগুলো আইনগতভাবে যুক্তিসঙ্গত নয় এবং লক্ষ লক্ষ অযোগ্য ব্যক্তিকে মার্কিন নাগরিকত্বের সুযোগ দিচ্ছে।’ বিভাগটি সুপ্রিম কোর্টকে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নতুন মেয়াদে মামলাটি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করার আহ্বান জানিয়েছে।
তার এই পদক্ষেপের ফলে একাধিক মামলা দায়ের হয়।
মামলাগুলোতে যুক্তি দেওয়া হয়, এই আদেশ সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত সেই সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কেউই মার্কিন নাগরিক। একাধিক নিম্ন আদালত আদেশটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে স্থগিত করার পর প্রশাসন বিরোধগুলো সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যায়। যাতে ফেডারেল বিচারকদের তথাকথিত ‘সর্বজনীন’ নিষেধাজ্ঞা জারি করার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
যেখানে রাষ্ট্রপতির নীতি যেকোনো স্থান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োগে বাধা দেয়।
এই প্রক্রিয়ার ফলে ৬-৩ রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্ট জুন মাসে বিচারকদের ক্ষমতা সীমিত করে একটি যুগান্তকারী রায় দেয়। তবে একই রায়ে আদালত রাজ্য বা পৃথক বাদীদের ক্লাস অ্যাকশন মামলার মাধ্যমে ব্যাপক ত্রাণ দেওয়ার সুযোগও খোলা রাখে।
শুক্রবারের আপিলগুলোতে ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি মামলা করেছে ওয়াশিংটনসহ চারটি অঙ্গরাজ্য এবং আরেকটি করেছে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ফেডারেল আদালতে একদল ব্যক্তি।
জুলাই মাসে সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক নবম মার্কিন সার্কিট কোর্ট রাজ্যগুলোর পক্ষে রায় দেয়। একই সময়ে নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডে মার্কিন জেলা বিচারক জোসেফ ল্যাপ্ল্যান্ট মামলাকারীদের ক্লাস অ্যাকশন হিসেবে এগোনোর অনুমতি দেন, যার ফলে ট্রাম্পের আদেশটি সারা দেশে কার্যকরভাবে স্থগিত থাকে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের মামলাকারীদের আইনজীবী কোডি উফসি শুক্রবার রয়টার্সকে বলেন, ‘এই নির্বাহী আদেশ সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রশাসন যত কৌশলই নিক না কেন, আমরা নিশ্চিত করব এই নিষ্ঠুর ও অযৌক্তিক আদেশের মাধ্যমে কোনো শিশুর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যাবে না।’ প্রশাসন বিচারপতিদের অনুরোধ করেছে, তারা যেন বোস্টনভিত্তিক ফেডারেল আপিল আদালতের রায়ের আগেই নিউ হ্যাম্পশায়ারের বিরোধটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।
১৮৬১-৬৫ সালের গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দাসপ্রথা বিলুপ্তির প্রেক্ষাপটে ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪তম সংশোধনী পাস হয়। সেখানে বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বা নাগরিকত্বপ্রাপ্ত সকল ব্যক্তিই মার্কিন নাগরিক। কিন্তু প্রশাসনের দাবি, ১৪তম সংশোধনী অবৈধ অভিবাসী বা সাময়িকভাবে বৈধভাবে থাকা ব্যক্তিদের (যেমন ছাত্র বা কর্মভিসাধারী) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
শুক্রবারের আইনি নথিতে বিচার বিভাগ যুক্তি দিয়েছে, জন্মগত নাগরিকত্ব ‘অবৈধ অভিবাসনের জন্য শক্তিশালী প্রণোদনা’ হিসেবে কাজ করছে এবং ‘বার্থ ট্যুরিজম’ বা বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্মদানের শিল্পকেও উসকে দিচ্ছে। অফিসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন বারবার আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জ চলাকালীন তার নীতিগুলো কার্যকর করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে, বিশেষ করে অভিবাসন সীমিতকরণ ও বহিষ্কার ত্বরান্বিত করার বিষয়ে।
সূত্র : রয়টার্স
ইএ/টিএ