পুরাতন পথে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন কিছু আনতে হবে। বিগত সরকারের আমলে দেশ ও জাতির জন্য বিপজ্জনক এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রকল্পগুলো বাতিল করতে হবে।’
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নবায়নযোগ্য শক্তির রূপান্তর : চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে এ সব কথা বলেন তিনি।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ‘আমাদের দ্রুত নবায়ণযোগ্য জ্বালানি স্থানান্তর এ বিশ্বে মডেল হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি। এখন সময় আছে, তরুণ প্রজন্মকে সৌর শক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। তারাই পারবে পরবর্তী নীতি তৈরি করতে।
এ ক্ষেত্রে বিগত সরকারের গৃহীত নীতি বাদ দিয়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ধরা’র উপদেষ্টা ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রান্ডাইস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নবায়ণযোগ্য শক্তি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. সাজেদ কামাল, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. শাকিলা আজিজ, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের লিড এনার্জি অ্যানালিস্ট ফর বাংলাদেশ শফিকুল আলম, তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. শওকত আরা বেগম, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল প্রমূখ।
সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নবায়নযোগ্য শক্তিতে দ্রুত রূপান্তরের গুরুত্ব নিয়ে গভীর আলোচনা ও নীতিগত সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। এ সময় বক্তারা একমত হন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমাতে এবং একটি সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দ্রুত রূপান্তর কৌশল প্রণয়ন অপরিহার্য। তবে, এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং সমন্বিত নীতির অনুপস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।
ড. সাজেদ কামাল বলেন, জ্বীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়ণযোগ্য শক্তিতে রুপান্তরের জন্য লাগবে নতুন নতুন উদ্ভাবন। বিশ্বের নানা অঞ্চলের মানুষ সেখানকার প্রয়োজনীয়তা বা স্থানীয় চাহিদার ওপর নির্ভর করে সৌর শক্তি বা নবায়ণযোগ্য শক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের চাহিদা এবং ভৌগলিক অবস্থান এর ওপর নির্ভর করেও উদ্ভাবনে যেতে হবে।
বাংলাদেশের সৌর শক্তির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন মো. আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার ৫.২২ শতাংশ নবায়ণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। যা আগামী ২০৩০ সালে ১১ শতাংশে উন্নিত করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল ব্যবহারে তিনি অনেক জমির ব্যবহার, মানুষের অভ্যাস এবং কৃষি জমির ব্যবহারকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
নবায়ণযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা তুলে ধরে ড. শাকিলা আজিজ বলেন, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সূর্যের রেডিয়েশন বেশি। সেখানে সৌর শক্তি উৎপাদন বেশি হবে। উপকুলে অঞ্চলে বাতাস, বাসার ছাদ, সরকারি খাস জমি ব্যবহার বাড়াতে পারলে দেশে নবায়ণযোগ্য শক্তির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।
শরীফ জামিল বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নবায়ণযোগ্য শক্তির রূপান্তরের দিকে যেতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের যে সকল জায়গায় জ্বীবাশ্ম জ্বালানির প্ল্যান্ট হয়েছে সেখানে পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়ের চরমমাত্রায় পৌছেছে। এদেশের মানুষকে এবং পরিবেশকে বাঁচাতে এখনি দ্রুত রূপান্তরের দিকে যেতে হবে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সফল করতে সরকার, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ ও বেসরকারি খাতকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বিদ্যমান আইন ও নীতির কারণে জ্বীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে এসে নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর সম্ভব হচ্ছে না। নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে দ্রুত রূপান্তরের জন্য সরকারি-বেসরকারি ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এবি/টিকে