সিলেটে আওয়ামী লীগের লোকজন যেন প্রকাশ্যে থাকতে না পারেন, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা ভাইরাল- দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, অতীতের অবস্থা থেকে যদি পুলিশ শিক্ষা না নেয় অর্থাৎ পুলিশ রাষ্ট্রের, পুলিশ সরকারের, পুলিশ জনগণের- এই চিন্তা-চেতনার আলোকেই তাকে আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আইনের বাইরে গেলেই কিন্তু ঝামেলা হবে। সম্ভবত আমাদের পুলিশের যারা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা, তারা দলীয় আনুগত্য চায়। সরকারের আনুগত্য চায় যার যার চেয়ারে থাকার জন্য।
আর এটা করতে গিয়েই কিন্তু বিগত আমলে যে বিপর্যয় হয়েছে, এখন সেই বিপর্যয় থেকে বাইরে চলে গেছে। পুলিশ খুব সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনীতে রূপ নিয়েছে- এর মনে করার কোনো কারণ নেই।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ‘ভয়েস বাংলা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, সিলেটে আওয়ামী লীগের লোকজন যেন প্রকাশ্যে থাকতে না পারেন, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা ভাইরাল অর্থাৎ সিলেটে আওয়ামী লীগের লোকজন যাতে প্রকাশ্যে থাকতে না পারে, এটা কোনো হতে পারে? এটা সেই আগের আমল, ওই আমলে আমরা দেখলাম কি- পুলিশরা রীতিমতো পুলিশ নেই, মানে আওয়ামী লীগ।
সব পুলিশ কে কত আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং জোরালো বক্তব্য রাখছে অনেকটা রাজনৈতিক নেতাদের মতো, তারা সেভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
বেনজীরের বক্তব্য শুনলে তো আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই লজ্জা পাবেন। এখন আবার ওই একই ট্রেন্ড। কারণ যে পুলিশ আগে আওয়ামী লীগকে জি হুজুর, জি হুজুর বলতো- এখন তারাই আবার বিএনপি-জামায়াত বা ইউনূস সরকারকে খুশি করার জন্য একই পন্থা অবলম্বন করেছে।
এরকম নির্দেশনা দিতে পারে না। বলতে পারে যে আওয়ামী লীগের লোকজন যাতে মিছিল-সমাবেশ না করতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে থাকতে পারেন না, এটা হয় কোনোদিন? আওয়ামী লীগের এরকম বিপুলসংখ্যক লোকজন-কর্মী-সমর্থক, তারা কোথায় যাবে তাহলে? তারা লুকিয়ে লুকিয়ে চলবে- এটা কোনো ভালো জিনিস হলো? এটা কি বলতে পারে? এটা কোন বিধানে আছে? কোন আইনে আছে? কোন সংবিধানে আছে যে তারা তারা প্রকাশ্যে না থাকতে পারেন-সেই নির্দেশনা দেবেন।
তিনি বলেন, সিলেট মহানগর এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন যেন প্রকাশ্যে থাকতে না পারেন মহানগরের ছয় থানার কর্মকর্তাকে পুলিশ কমিশনারের দেওয়া এমন একটি নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই নিয়ে এখন আলোচনা সমালোচনা চলছে।
যোগাযোগ করলে পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী জানান, আমি বলেছি একটা, ড্রাফট করেছে আরেকটা। আমার অগোচরে এটা সই হয়ে গেছে। আমরা কারেকশন দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের ফেসবুক পেজে সেটা আপনারা পেয়ে যাবেন। এই ড্রাফট না দেখেই ছেড়ে দিল? এটা এক ধরনের সমালোচনার মুখে হয়ত বক্তব্য চেঞ্জ করছে। নির্দেশনায় আছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এসএমপির আওতাধীন অর্থাৎ সিলেট মহানগরের আওতাধীন এলাকায় কোনো আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের লোকজন প্রকাশ্যে যাতে এলাকায় না থাকতে পারে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সব অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এসি, এডিসি এবং ডিসিরা এ বিষয়ে তদারকি করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী সিলেটে পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকের পর গত রোববার পুলিশ কমিশনার স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা মহানগর পুলিশের ছয় থানার ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। ওই নির্দেশনা-সংবলিত চিঠির ১৩ নম্বর ও সর্বশেষ সিদ্ধান্তটিই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে যেটি ছড়িয়েছে, এটি সঠিক নয়। পুলিশ কমিশনারের অভ্যন্তরীণ বৈঠকের বক্তব্য অনুযায়ী সিদ্ধান্তটি অন্য রকম ছিল। ওই সিদ্ধান্ত সিলেট মহানগর পুলিশের ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যা-ই হোক, এটা সঠিক-বেঠিক বড় কথা না। নিশ্চয়ই ঘটনা ঘটেছে। এখন অতীতের অবস্থা থেকে যদি পুলিশ শিক্ষা না নেয় অর্থাৎ পুলিশ রাষ্ট্রের, পুলিশ সরকারের, পুলিশ জনগণের- এই চিন্তা-চেতনার আলোকেই তাকে আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আইনের বাইরে গেলেই কিন্তু ঝামেলা হবে। সম্ভবত আমাদের পুলিশের যারা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা, তারা দলীয় আনুগত্য চায়। সরকারের আনুগত্য চায় যার যার চেয়ারে থাকার জন্য। আর এটা করতে গিয়েই কিন্তু বিগত আমলে যে বিপর্যয় হয়েছে, এখনো সেই বিপর্যয় থেকে বাইরে চলে গেছে। পুলিশ খুব সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনীতে রূপ নিয়েছে- এর মনে করার কোনো কারণ নেই।
এমআর/টিকে