লোগো পাল্টালেই গণতান্ত্রিক হওয়া যায় না : জিল্লুর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ১৯৭১’র ভূমিকার দায় অস্বীকার করে শর্তযুক্ত কথায় সেরে দিলে, ইতিহাসের ক্ষত সাড়ে না। গণতন্ত্র মানে সংখ্যার জয় নয়, ইতিহাসের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত সমঝোতা। নৈতিক দায় স্বীকার, ভিকটিমদের প্রতি ন্যায় -এসব ছাড়া ক্ষমতার বৈধতা আসে না। আবার এটিও সত্য রাজনৈতিক ময়দানে যেকোনো দলের বিবর্তনের সুযোগ থাকা চাই।

কিন্তু সেই বিবর্তন বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে নীতিগত অবস্থানের স্বচ্ছতা, মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু, নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি, নারী-পুরুষ সমতার অকাট্য নিশ্চয়তা এবং আইনের শাসনের প্রশ্নে অনড় থাকার প্রমাণ লাগবে। শুধু লোগো পাল্টে বা নির্বাচনী কৌশল বদলে গণতান্ত্রিক হওয়া যায় না।

জামায়াতে ইসলামীর দলীয় লোগো পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

জিল্লুর রহমান বলেন, জুলাই সনদকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, গণভোট, সংবিধান, আদেশ -এসব প্রক্রিয়াগত বিতর্কে সরকার ও রাজনীতি আজ আটকে আছে।

প্রক্রিয়া জরুরি কারণ সেটি আস্থার ভাষা। কিন্তু প্রক্রিয়ায় সব নয়। ফলাফল হতে হবে মানুষের মৌলিক অধিকার, অংশগ্রহণ ও দায়বদ্ধতার শক্তিশালী কাঠামো। গণভোট হলে প্রশ্নগুলো হতে হবে স্পষ্ট, জনপরীক্ষিত এবং বিভ্রান্তিহীন।

সংসদীয় পথে গেলে চাই আন্তরিক টাইম বাউন্ড রোডম্যাপ। সবচেয়ে বড় কথা, যে পথ নেই, সেটি যেন রাজনৈতিক সুবিধাবাদের জয়যাত্রা না হয়ে ওঠে। বরং রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতি দেওয়ার সংবিধানগত সমঝোতা হয়। এলিট ডিলে ক্ষণিকের স্বস্তি মিলতে পারে কিন্তু মানুষ রাষ্ট্রের সম্পর্কটি সুস্থ হয় না।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও দ্রুত বিচার -এ তিনটি ইস্যু দেখিয়ে শরীয়া শাসনের পক্ষে আবেগ তৈরি করা সহজ।

কিন্তু সেখানে মত প্রকাশ, শিক্ষা সংগঠন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার বাস্তব অবস্থা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় কঠোর নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলা দেখাতে পারলেও তার নাগরিক মর্যাদার বিকাশ ঘটায় না। বাংলাদেশে কেউ শরীয়ার নীতিকল্পনা নিয়ে কথা বলতেই পারেন। এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু রাষ্ট্রের শাসনতত্ত্ব হবে অংশগ্রহণ, সমতা, অধিকার ও আইনের শাসন -এই চার স্তম্ভে দাঁড়ানো একটি সর্বজনীন সামাজিক চুক্তিতে।

এই উপস্থাপক বলেন, ধর্মীয় বা সেক্যুলার যেকোনো ব্যাখ্যা যদি জ্ঞানচর্চা, ভিন্ন মতের অধিকার, নারীর সমান মর্যাদা, সংখ্যালঘু প্রবণতার নিরাপত্তা ও আধুনিক শিক্ষার প্রবাহকে সংকুচিত করে তবে সেটি রাষ্ট্রের পথ নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ধর্মরাষ্ট্র বিতর্কের বৃত্ত থেকে অধিকার রাষ্ট্রের মজবুত মাটিতে উঠিয়ে আনতে হবে। শিল্প সংস্কৃতির মঞ্চে যে অস্বস্থি জমেছে, শোরুম উদ্বোধনে বাধা, অনুষ্ঠান পণ্ড ও শিল্পীদের বিদেশে সেকেন্ড হোমের খোঁজ -এসবও একই রোগের উপসর্গ। সংস্কৃতি বাতাসে বাঁচে, ভয় পেলে নিভে যায়। রাষ্ট্র যদি আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত না করে, মত প্রকাশের ন্যূনতম স্পেস না দেয়, তাহলে প্রতিভা দেশ ছাড়া হবেই।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পিআরের দাবি জানানো অনেকেই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে বাতাস করেছে : সালাহউদ্দিন Oct 04, 2025
img
ইতিহাসে প্রথমবার, এক ওভারের ৬ বলেই বাউন্ডারি Oct 04, 2025
img
আমি আমার মেয়েদের সঙ্গে আরও বেশি দিন বাঁচতে চাই: তিন্নি Oct 04, 2025
img
আমরা মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির খুব সন্নিকটে : ট্রাম্প Oct 04, 2025
img
ভারতকে ট্রফি না দিয়ে গোল্ড মেডেল পাচ্ছেন নাকভি Oct 04, 2025
img
জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন চায় খেলাফত মজলিস Oct 04, 2025
img
নিজ এলাকার মানুষের জন্য মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন শরিফুল Oct 04, 2025
img
আমরা চাই যিনি নামাজের ইমাম, তিনি হবেন সমাজেরও ইমাম: জামায়াত আমির Oct 04, 2025
img
অবরোধ প্রত্যাহারের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক Oct 04, 2025
img
১৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার রেকর্ড গড়লেন লোকেশ রাহুল Oct 04, 2025
img
সাবেক এমপি গিনির মৃত্যুর খবর গুজব : কারা অধিদপ্তর Oct 04, 2025
img
প্রশাসনে একটি ধর্মভিত্তিক দলের অনুগতদের বসানো হচ্ছে: রিজভী Oct 04, 2025
img
অভিনয়ে আর ফিরবেন না হাসান মাসুদ! Oct 04, 2025
img
প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে জাপান! Oct 04, 2025
img
তামিল থ্রিলারে ফিরছেন জনপ্রিয় অভিনেতা বিষ্ণু বিশাল! Oct 04, 2025
img
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ Oct 04, 2025
img
ইউনূস চোর বাটপারদের লুটপাটের সুযোগ করে দিল : ইলিয়াস Oct 04, 2025
img
চামুন্ডা সিনেমায় অন্ধকার চরিত্রে আলিয়া ভাটের নতুন চ্যালেঞ্জ! Oct 04, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তিতে সমর্থন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর Oct 04, 2025
img
সচিবালয়ে নিষিদ্ধ হলো সিঙ্গেল প্লাস্টিকের ব্যবহার Oct 04, 2025