দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবার (৪ অক্টোবর) সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময়ও এই ধরনের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়নি আমি।’
গত ২৯ আগস্ট বিজয়নগরের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেই নুর আরো বলেন, ‘যদি আমার ওপর হামলার বিচার না করা হয় এবং জড়িতদের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের গলায়ও গামছা পরাব।’
নুরুল হক নুর ঘটনার বিচারসহ সরকারি তদন্ত কমিটির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, তদন্তে গাফিলতি থাকলে দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন বিরাট সংকটে পড়বে; তাই যারা হামলায় জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। নইলে রাজপথে ‘জুলাই সনদ’ আদায়ের মতো আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হব।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে সহযোগিতা করছি, কিন্তু সরকার থেকে কোনো সুবিধা পাই না; আমরা কোনো ভাগ-বাটোয়ারার অংশীদারও নই। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে আমার ওপর হামলার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’
নুর আরো বলেন, ‘দেশে এখন বিশৃঙ্খলা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাজন দেখা দিচ্ছে; পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যদি বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন না হয়, তবে দেশ পুনরায় সংকটে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।’
তিনি বলেন, ‘একটি দলের প্রধানকে এভাবে আক্রমণ করে সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে সম্ভব হবে? সমঝোতার নির্বাচনে যাদের ইশারা দেওয়া হবে, তারাই নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাবে। যাদের সিগন্যাল দেওয়া হবে না—তাদের ওপর হামলা করা হবে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। সুতরাং আমার ওপর হামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবে। নুর অভিযোগ করেন, এটি একটি টার্গেট অপারেশন ছিল। তাদের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণ করে অন্যদের প্রতি একটি বার্তা পাঠানো। তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও গণ-অভ্যুত্থানকারী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি পরবর্তী সিরিয়ালে পড়তে না চান, যেই বড় কর্মকর্তা বা ক্ষমতাধর ব্যক্তি জড়িত থাকুক তাকে বিচারের মুখোমুখি করে চাকরিচ্যুত করতে হবে।’
তিনি সরকারি তদন্ত কমিটির কার্যকারিতাও সমালোচনা করে বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি গতানুগতিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, মিটিং হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশ পাচ্ছে না। প্রায় ৩৫ দিন পার হয়ে গেলেও বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও কাজের ফলাফল যথেষ্ট সন্তোষজনক নয়, এতে গাফিলতি স্পষ্ট।
নুর ২২ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। সেখানে তার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক ও স্পাইন সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ হোসেন রাসেল।
২৯ আগস্ট রাতে বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন নুর। ঢাকা মেডিক্যালে কয়েক দিন চিকিৎসা গ্রহণের পর শারীরিক জটিলতার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।
ইউটি/টিএ