জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে

নির্বাচনের দিন গণভোট চায় বিএনপি ও এনসিপি, আগে চায় জামায়াতে ইসলামী

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সম্মতির জন্য গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। তবে কখন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।

রবিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। তবে বিএনপি ও এনসিপি বলছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে আয়োজন করতে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলছে নির্বাচনের আগেই গণভোট হলে ভালো।’

এটি জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পদক্ষেপ। অন্যান্য বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

আলী রীয়াজ বলেন, ‘কমিশন সনদ বাস্তবায়নে সরকারের কাছে এক বা একাধিক সুপারিশ আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে দেবে। তার আগে আগামী ৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে যে আইনসভা গঠিত হবে এবং সে আইনসভা জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করবে তা যেন টেকসই হয়, সে ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যত ঐকমত্য রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য তৈরি বিশেষ করে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়ে দলগত অবস্থান থেকে অনেক রাজনৈতিক দল সরে আসায় তিনি দলগুলোর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে কমিশন খুব শিগগির সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরি করে সরকারের কাছে দিতে পারবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একটি অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। অধ্যাদেশ জারি করে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলতে পারবে। সেই জনরায় হবে চূড়ান্ত।’

তিনি আরো বলেন, ‘জনরায় হচ্ছে চূড়ান্ত, এটা ইম্পোজ করা না।

পার্লামেন্ট আসার পরে এমন কোনো বিধান করতে পারবে না, যেটা পরবর্তী সংসদকে বাধ্য করা যাবে না ’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের বিষয়ে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল একমত বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। তবে আমরা চাই, গণভোট নির্বাচনের আগেই হোক, বলেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করে নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরে গণভোট হতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেও হতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। জনগণকে জটিল অবস্থায় না ফেলে সহজভাবে এগোলে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণভোট হলে এটা কখনো চ্যালেঞ্জ করতে গেলে টিকবে না। পার্লামেন্টে এটাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।’

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সরকারকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে। যেখানে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জনগণ মতামত দেবে। এ বিষয়ে বেশির ভাগ দল একমত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ভাষাগত ভিন্নতা বাদ দিলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে দলগুলো মোটামুটি একমত। যেখানে সনদ বাস্তবায়নে জনগণ হ্যাঁ বা না ভোট দেবে। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের বিষয়টিও অনুসরণ করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে জনগণ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পক্ষে রায় দেবে।’

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ৮০ শতাংশ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। বাকি ২০ শতাংশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট চেয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

এর আগে বাংলাদেশে ৩ বার গণভোট হয়েছে। এর মধ্যে ২ বার অনুষ্ঠিত হয় প্রশাসনিক গণভোট এবং একবার অনুষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক গণভোট।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
লাইফ সাপোর্টে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম Oct 05, 2025
img

লা লিগা

এবার সেভিয়ার মাঠে ৪-১ গোলে ধরাশায়ী বার্সেলোনা Oct 05, 2025
img
এভারেস্টে তীব্র তুষারঝড়, আটকা প্রায় ১ হাজার পর্যটক Oct 05, 2025
img
সীমান্ত দিয়ে পুশইন সহ্য করা হবে না : রিজিয়ন কমান্ডার Oct 05, 2025
img
হংকংয়ের বিপক্ষে হামজাকে নিয়ে কী পরিকল্পনা হেড কোচ ক্যাবরেরার ? Oct 05, 2025
img

পরীর প্রশ্ন

‘আমার কেন শত্রু হবে?’ Oct 05, 2025
img
যেটা কানে আসার এসেছে, যেটা বুকে ধাক্কা লাগার সেটা লেগেছে : ঋতাভরী Oct 05, 2025
img
সুপ্রিম কোর্টে ভোট ডাকাতি : আবু সাইদ সাগর কারাগারে Oct 05, 2025
img
আগামীকাল লক্ষ্মীপূজা Oct 05, 2025
আমাদের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয়! Oct 05, 2025
শেষ মুহুর্তে শিশির মনির-সালাহউদ্দিন বিতর্ক! ‘করে ফেলেছি এবং করবো বিষয়টা এক নয়’ Oct 05, 2025
img
আবারও চলতি পথে এয়ার ইন্ডিয়ায় বোয়িং বিমানে ত্রুটি Oct 05, 2025
img
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভোটারদের নিয়ে খেলা চলছে : মনজুর আহমেদ Oct 05, 2025
img
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল জামায়াত নেতার Oct 05, 2025
img
২ দশক পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি তারেক রহমান Oct 05, 2025
img
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের নিকট নবনিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ Oct 05, 2025
img
ফোনে নেতানিয়াহুকে ধমক দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, কারণ কী! Oct 05, 2025
img
ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার ইতিহাস গড়ল পাকিস্তান Oct 05, 2025
img
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন হবে না : প্রিন্স Oct 05, 2025
img
৬৫ টন কাঁচা মরিচ এলো ভারত থেকে ! Oct 05, 2025