দীর্ঘ প্রায় সতেরো বছর পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসিকে দেওয়া তারেক রহমানের প্রায় ৪৫ মিনিটের এ সাক্ষাৎকারটি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মির্জা গালিব।
এ সাক্ষাৎকার নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন মির্জা গালিব।
সোমবার (৬ অক্টোবর) করা এ পোস্টে মির্জা গালিব লিখেছেন- ‘মিডিয়ার সাথে তারেক রহমানের কথা বলাটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। এই মুহূর্তে বিএনপির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য তারেক রহমান বেস্ট। তারেক রহমানের ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তার রিব্র্যান্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে জনপরিসরে বিএনপির ইমেজ বাড়ানোর সুযোগ আছে।’
গালিব লেখেন, ‘কথা বলার ভঙ্গি, শব্দচয়ন এবং অ্যাটিচ্যুডের দিক থেকে তারেক রহমান খুবই সজ্জন। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ফার্স্ট পারসনের অনুপস্থিতি। ‘আমি’, ‘আমার দল’, ‘আমার দেশ’ -এর পরিবর্তে বহুবার ‘জনগণ’, ‘দেশ’ -এ রকম শব্দচয়ন করেছেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এবং তার পরিবার যে জুলুমের মধ্য দিয়ে গেছেন, ইমোশনালি সেটা টাচ করেছেন এই ইন্টারভিউতে। এবং এই জুলুমকে আরও মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়েছেন— এ অংশটুকু অসাধারণ ছিল। আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যাপারে বেশ স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে পলিটিক্যাল ডিসেন্সি মেইনটেইন করছেন— যেটা এই সময়ে তার মতো রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অনেক কাম্য।’
তবে কিছু বিষয় নিয়ে তারেক রহমান আরেকটু খোলামেলা কথা বলবেন বলে আশা করেছিলেন মির্জা গালিব। এ পোস্টে তিনি লেখেন- ‘কয়েকটা জায়গায় আমার ক্রিটিক আছে : ১। আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলার পরিবর্তে ‘স্বৈরাচার’ বলেছেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো স্পষ্ট অবস্থান না নিয়ে জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন- এটা এক ধরনের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থান। (এই দুই প্রশ্নে জামায়াতের অবস্থানও অনেক ক্ষেত্রে নমনীয় ছিল। অতীতে জামায়াতের আমিরের আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট না বলা এবং নিষিদ্ধের ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান না থাকার অবস্থানেরও আমি সমালোচনা করেছি)।
২। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ একটা রাজনৈতিক ‘আন্দোলন’ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন তারেক রহমান। এই দৃষ্টিভঙ্গি তরুণ প্রজন্মের সাথে বিএনপির যে ট্রাস্টের টানাপড়েন আছে, সেটা বরং আরও বাড়াবে।
৩। বিএনপিকে দল হিসেবে গোছানোটা যে প্রায়োরিটি হওয়া উচিত- এটা তার বক্তব্যে খুব স্পষ্ট হয়নি। বরং সরকারে এলে আইনশৃঙ্খলার জায়গা থেকে এই সমস্যা সমাধানে বিএনপি বেশি আগ্রহী- এমনটাই মনে হয়েছে আমার কাছে। আমার অবজারভেশন এই ক্ষেত্রে ভিন্ন। অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মধ্য দিয়ে দল হিসেবে গোছানো এবং শক্তিশালী না হতে পারলে সুশাসন দেওয়া বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।
৪। মিডিয়া আউটলেট হিসেবে বিবিসি বাংলাকে বেছে নেওয়াটা ভালো লাগেনি। বিবিসি বাংলা সাধারণত আওয়ামী লীগের যে বাংলাদেশবিরোধী ফ্যাসিস্ট রাজনীতি সেটাকে এন্টারটেইন করতে পছন্দ করে।’
পিএ/টিকে