জীবন মানেই তো যন্ত্রণা,বেঁচে থাকতে বোধ হয় শেষ হবে না অথবা কী সুন্দর এক গানের পাখি,মন নিয়া সে খেলা করে- এমন হাজারও গানের গীতিকার ও সুরকার বাউল কবি সালাম সরকার। এই সালাম সরকার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রায় দুইমাস যাবত বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা,ময়মনসিংহ চিকিৎসায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা খরচ করছে সে। বর্তমানে অর্থাভাবে চিকিৎসা থেমে গিয়েছে তার।
একসময় বাস্তবভিত্তিক অনেক গানের মাধ্যমে জীবনের কঠিন সত্যকে তিনি সুরে বেঁধেছিলেন। আজ তিনি নিজেই জীবনের কঠিন নিয়মে আটকে গেছেন।
বাউল সালামের গান শুধু বাউলদের জন্য নয়,তার লেখা গান সর্বজনীন। সালাম সরকারের লেখা সহস্রাধিক গানের মাঝে শতাধিক গান আছে যা যুগোর্ত্তীর্ণ বলা যায় নিঃসন্দেহে।
জনপ্রিয় এত গান খুব কম গীতিকারেরই আছে।সেই দিক বিবেচনায় তিনি অনন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী।
বাউল সালাম সরকার নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পৌরশহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নিজ বাড়িতে পা ভাঙা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। তার সংসারে স্ত্রীসহ দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
এক ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। সেই ছেলেরদিকে একজন নাতিও রয়েছে। অন্য ছেলে পড়াশোনা করছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসার অভাবে এখন তাঁর দিন কাটছে চরম কষ্টে, ওষুধের দাম, চিকিৎসা, সংসারের ব্যয় সবকিছুই যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময় এই মানুষটি গ্রামের মাটিতে মিশে থাকা ভালোবাসা, মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর বাউল গানে।
মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সেই শিল্পী আজ নিজেই বেদনায় নিমজ্জিত নিঃশব্দে গাইছেন কষ্টের গান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সালাম সরকার করোনাকালীন ২০২০ সালের দিকে নেত্রকোণা যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়েন। তখন তার ডান পায়ের কোমরের কাছে হাড় ভেঙে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসায় সুস্থ্য হোন। পরে গলায় সমস্যা হয়ে কণ্ঠ বন্ধের উপক্রম হয়। দীর্ঘ চিকিৎসায় সেরে উঠেন। এবার গত ২মাস পূর্বে সেই ভাঙা পায়ে পড়ে গিয়ে আবার হাঁটুর নিচে ভেঙে যায়। তারপর প্রথমে ঢাকায় অনেক টাকা ব্যয়ে বড় অপারেশন হয়। এক মাস ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি আসেন। কিছু দিন পর ইনফেকশান দেখা দেয়।
ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে দৈনিক ৫ হাজার টাকা সিট ভাড়া দিয়ে চিকিৎসার্থে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ ১মাস। বর্তমানে কেন্দুয়ার পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তার নিজ বাসায় অসহায়ের মতো জীবনযাপন করছেন এই গানের পাখি। তার স্ত্রী তার সেবা করতে করতে নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এরপর থেকে কাজ বন্ধ, আয় বন্ধ, কিন্তু চিকিৎসা বন্ধ হয়নি, থেমে আছে শুধু সহায়তার হাত। অথচ এমন গুণী শিল্পীরাই আমাদের সংস্কৃতির গর্ব, আমাদের সমাজের প্রাণ।
কেন্দুয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সেলিমন ও রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভূঞা বলেন, যিনি সারাজীবন ভালোবাসা, মানবতা আর মাটির গন্ধের গান গেয়েছেন, আজ তিনিই চিকিৎসার অভাবে কাতর। তাঁর পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
বাউল সালাম সরকারের শিষ্য (গানের ছাত্র) মুকুল সরকার আবেগভরে বলেন, আমার উস্তাদ এখন ভীষণ কষ্টে আছেন। সমাজের হৃদয়বান মানুষ ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের প্রতি অনুরোধ আসুন, আমরা সবাই মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিই। আপনার সামান্য সহযোগিতাই তাঁর জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে নতুন আলো।
সরেজমিনে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার অসুস্থ বাউল সালাম সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নেন এবং সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেন। এ সময় স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
পিএ/টিকে