এ বছর শুরু হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলেও হয়ত তার হাতে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারটি উঠেছে না। তবে এই বছর কার হাতে উঠতে যাচ্ছে নোবেল শান্তি পুরস্কার? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে শুক্রবার সকাল ১১টায় (বাংলাদেশের দুপুর ৩টা)। এ দিন নরওয়ের অসলোতে অবস্থিত নোবেল কমিটি ঘোষণা করবে কার হাতে উঠতে যাচ্ছে নোবেল শান্তি পুরস্কার।
১৯৪৬ সাল থেকে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় যেই বিশ্বব্যাপী সশস্ত্র সংঘাতের তথ্য সংগ্রহ করছে, তখন থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বের সশস্ত্র সংঘাতের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, তিনি ‘আটটি সংঘাত’ মিটিয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের যোগ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা মতে, অন্তত এই বছর নোবেল কমিটি তার নাম বাছাই করবে না।
এএফপিকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেন, ‘না, এই বছর ট্রাম্প পাবেন না।
’তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু হয়তো আগামী বছর? ততক্ষণে তার নানা উদ্যোগ, বিশেষ করে গাজা সংকট নিয়ে থাকা অশান্তি শান্ত হয়ে যাবে।’
অসলোর শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, ‘গাজার জন্য শান্তি স্থাপনের চেষ্টা ছাড়াও আমরা এমন নীতিগুলো দেখেছি, যা নোবেলের ইচ্ছার বিরোধী।’ গ্রেগারের মতে, ট্রাম্পের অনেক কর্মই নোবেল শান্তি পুরস্কারের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন।
ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহু পক্ষীয় চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন। এমনকি মিত্র ও শত্রু উভয়ের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিলেন, ন্যাশনাল গার্ডকে মার্কিন শহরগুলোতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আক্রমণ করেছেন।
পুরস্কার প্রদানকারী পাঁচ সদস্যের কমিটির চেয়ারম্যান জোর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে থাকি। কোন ব্যক্তির পুরো সংগঠন বা ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমরা প্রধানত দেখি তারা শান্তির জন্য কী অর্জন করেছে।’
এই বছর ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংগঠন নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে, যার তালিকা ৫০ বছর ধরেই গোপন রাখা হয়। বিশ্বের বহু আইনপ্রণেতা, মন্ত্রিসভা সদস্য, পুরানো পুরস্কারজয়ী, নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নোবেল কমিটির সদস্যরা প্রার্থীদের প্রস্তাব দিতে পারেন।
২০২৪ সালে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমায় বেঁচে থাকা গোষ্ঠী নিহোন হিদানকো কে, যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের জন্য কাজ করেন। যদিও এই বছর স্পষ্ট কোন প্রার্থীর নাম নেই, তবে অসলোতে কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ ক্ষেত্রে সুদানের যুদ্ধ ও ক্ষুধার মধ্যে থাকা মানুষের জন্য খাবার ও সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের একটি নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি রাশিয়ার ক্রেমলিন সমালোচক আলেক্সেই নাভালনির বিধবা ইউলিয়া নাভালনাইয়া ও ডেমোক্র্যাটিক ইন্সটিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নির্বাচন নিরীক্ষক সংস্থাটিও আলোচনায় রয়েছে।
নরওয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক হালভার্ড লেইরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটি শান্তির ক্লাসিক্যাল ধারণার দিকে ফিরে এসেছে। যেখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারীর অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা হয়তো খুব বিতর্কিত নন এই বছর এমন কেউ পাবেন।’
নোবেল কমিটি ট্রাম্পের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রতি তাদের অঙ্গীকার আবারও প্রমাণ করতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে পুরস্কার দিয়ে অথবা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা উএনএইচসিআর কিংবা ফিলিস্তিনের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএকে পুরস্কার দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক আদালত অথবা সাংবাদিকতা ও প্রকাশনার স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা কমিটি ‘টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ বা ‘রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডারস’ পেতে পারে পুরস্কার। আবার কমিটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বিজয়ীকেও বেছে নিতে পারে।
সূত্র : এএফপি