আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহীর কিশোরী মুনাজিয়া স্নিগ্ধা মুন (১৭)। যৌন হয়রানিসহ নানা সহিংসতা ও নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকা মেয়েদের অধিকার রক্ষা এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করায় তাকে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মুনের জন্ম রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সার্ভাইভার্স পাথ’ নামের একটি অলাভজনক সংগঠন। এটি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ এবং ভুক্তভোগীদের মানসিক ও আইনি সহায়তা দেয়।
স্কুলে অভিযোগ বাক্স বসানো থেকে শুরু করে দূরবর্তী গ্রামে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে নিরাপদ পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কর্মশালার মাধ্যমে মুন ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছেন। এসব কর্মসূচিতে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা আলোচনা হয়। বিশেষ করে কিশোরীদের অনিরাপদ পরিস্থিতি শনাক্ত করতে শেখানো এবং সহপাঠীদের পারস্পরিক সহায়তায় উৎসাহিত করা হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছেন মুন। একই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
‘সার্ভাইভার্স পাথ – এনডিং জেন্ডার – বেইসড ভায়োলেন্স’ নামের এ সংগঠনটি বাংলাদেশে যৌন সহিংসতা, লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন এবং সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা সার্ভাইভারদের মানসিক সহায়তা, আইনি পরামর্শ ও সামাজিক পুনর্বাসনে ভূমিকা রাখছে। সংগঠনের মূল লক্ষ্য- সচেতনতা বাড়ানো, ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো এবং নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা। মুন বলেন, ‘সার্ভাইভার্স পাথ কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি একটি আন্দোলন। আমরা বিশ্বাস করি কেউ একা লড়বে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, পাশে দাঁড়াতে হবে ভুক্তভোগীদের। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে নারী, শিশু বা পুরুষ– কেউ কোনো ধরনের সহিংসতা বা বৈষম্যের শিকার হবে না।’
উল্লেখ্য, ‘কিডস রাইটস’ সংগঠন প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার দিয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের সুরক্ষায় কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে রোমে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক সম্মেলন থেকে পুরস্কারটি চালু হয়। প্রতিবছর একজন নোবেল বিজয়ী শিশুকে এ সম্মাননা তুলে দেন। অনেকেই একে ‘শিশুদের নোবেল’ বলেও অভিহিত করেন।
ইউটি/টিকে