সংবাদকর্মীদের ভোটকক্ষে প্রবেশে কোনো বাধা থাকা উচিত নয় : সাখাওয়াত হোসেন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সংবাদকর্মীদের ভোটকক্ষে প্রবেশে অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকা উচিত নয়। অ্যাক্রিডিটেশন (সাংবাদিক কার্ড) দেওয়ার পর ভোটকক্ষে প্রবেশে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। এছাড়া ভোটকক্ষে একসঙ্গে কয়জন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন, সে বিষয়েও ছাড় দেওয়া উচিত।

শনিবার (১১ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা–২০২৫ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নীতিমালায় ছোট ছোট সংস্কার আনা দরকার। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, সরকারের নয়। ইসি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়, তবে যতটা সম্ভব উদার হতে হবে। অ্যাক্রিডিটেশন (সাংবাদিক কার্ড) দেওয়ার পর ভোটকক্ষে প্রবেশে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। কতক্ষণ থাকবেন, সেটাতেও বাধা দেওয়া ঠিক নয়। ভোটকক্ষে প্রবেশে অনুমতির বিধান রাখা উচিত নয়, এটা বাদ দেওয়া দরকার। তবে গোপন কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না।

কক্ষে দুজনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সময়ও এটা ছিল, কারণ ভোটকক্ষের জায়গা ছোট। সেখানে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, বিভিন্ন দলের এজেন্ট থাকেন। বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করলে জায়গা সংকট হয় এবং ভোটগ্রহণে অসুবিধা হয়। তবে এখন এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। প্রকৃত ভোটার ভোট দিচ্ছেন কি না, অনিয়ম হচ্ছে কি না- সেটা দেখাই আসল বিষয়। আমরা টিভিতে লাইভ দেখে ব্যবস্থা নিতাম। নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোটের সময় টিভিতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ইসির প্রতি অনুরোধ- সাংবাদিকদের সঙ্গে বসুন। এমন কিছু নেই, যা আলোচনা করে সমাধান করা যায় না। এখনো সময় আছে, বসুন। ‘মেইক ইট ট্রান্সপারেন্ট’। লাইভ টেলিকাস্ট করতে দিন। ইসি বলছে, শতাব্দীর সেরা নির্বাচন করবে- তাহলে ইসির চোখ হওয়া উচিত ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। কেন্দ্রে ঢোকার পর ভোটকক্ষে প্রবেশে অনুমতির দরকার নেই। আশা করি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে ইসি। এজন্য মিডিয়ার সহায়তা নিতে হবে, কারণ মিডিয়াই হচ্ছে তাদের চোখ। দুধে এক ফোঁটা চুন পড়লে যেমন সেটা বিক্রি করা যায় না, তেমনি একটি জাল ভোট পড়লেও রি–ইলেকশন করতে হবে।

২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের সময়কার এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা যখন নির্বাচন কমিশনার ছিলাম, তখন সাংবাদিকরাই ছিল আমাদের চোখ। আমরা আচরণবিধিসহ নানা সংস্কার করছিলাম, সাংবাদিকরা তখন অনেক সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমরা গণমাধ্যম থেকে ফিডব্যাক পেতাম। স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই ছিল আমাদের লক্ষ্য। শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো দেশেই হয় না, তবে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের প্রযুক্তির যুগে ইসির সবচেয়ে বড় সহায়ক গণমাধ্যমই হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বারবার বলছি- আমাদের কোনো দল নেই, কোনো দলকে সমর্থনও করব না। আমরা চাই একটি ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচন। কে এলো বা কে এলো না, সেটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা শুধু একটি ভালো নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। বাকিটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। ইসি যেভাবে চাবে, সরকারকে সেভাবেই সহায়তা দিতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর অনেক তরুণ ভোটার ভোট দিতে পারেননি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বলেছিলাম, যারা ভোটে অংশ নেবেন- তাদের ‘আম’ ও ‘ছালা’ দুটোই যাবে। আসাদের অনেক বন্ধু–বান্ধবদের দুটোই গেছে।

ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নারী সাংবাদিকরা চাকরির ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য আপনারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান। এ বিষয়ে বিএফইউজে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করতে পারে।

বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সহযোগিতায় দ্য ডেইলি স্টারের সভাকক্ষে আয়োজিত এই সভাটি আয়োজন করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে ও বিজেসির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব এবং আরটিভির হেড অব নিউজ ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, আরএফইডি সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীন (জেবেল), সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।


আইকে/টিকে


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল নামিবিয়া Oct 12, 2025
img
চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ Oct 12, 2025
img
অধিকাংশ সেনা সদস্য চান সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক : বিএনপি Oct 12, 2025
img
আরিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিপাকে সমীর ওয়াংখেড়ে Oct 12, 2025
img
আফগানদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সিরিজ হার বাংলাদেশের Oct 12, 2025
img
বিমানবন্দর সড়কে নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম! Oct 11, 2025
img
বিএনপি সরকারে এলে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করবে : শামা ওবায়েদ Oct 11, 2025
img
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাংবাদিকদের অবারিত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে: আজাদ মজুমদার Oct 11, 2025
img

সামান্তা শারমিন

শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে হবে Oct 11, 2025
img
রোববার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু Oct 11, 2025
img
মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ইরানের Oct 11, 2025
img
জামায়াত সৎ মানুষদের মনোনয়ন দিয়েছে : এটিএম আজহার Oct 11, 2025
img

জিল্লুর রহমানের বিশ্লেষণ

আবারও ভেল্কিবাজি, রাজনীতিতে কালো ছায়া Oct 11, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিলো চীন Oct 11, 2025
img
গাজায় চালু হচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম Oct 11, 2025
অনুশীলনের মাঝেই ৬ কোটি টাকার ক্ষতি রোহিতের Oct 11, 2025
ব্যারিস্টার নুসরাতের হাতে আংটি পরালেন ইশরাক Oct 11, 2025
কি কারণে রাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী? Oct 11, 2025
নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে ভিন্নমত বিশেষজ্ঞদের! Oct 11, 2025
চাকরি হারিয়ে যা বলছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা! Oct 11, 2025