আফ্রিকান মহাদেশে ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হলো শনিবার (১১ অক্টোবর)। রুবেন ট্রাম্পেলম্যানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে চার উইকেটে হারিয়ে এক অনন্য জয় তুলে নিয়েছে ক্রিকেটের পুঁচকে দেশ নামিবিয়া। একমাত্র টি–টোয়েন্টি ম্যাচে এই জয় নামিবিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় মুহূর্ত’ হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
দুই আফ্রিকান প্রতিবেশীর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এটাই ছিল প্রথম মুখোমুখি লড়াই। উইন্ডহোকের নামিবিয়া ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরা, কিন্তু সেটিই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় দলের ব্যর্থতার সূচনা। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ হয়রান হয়ে যায় নামিবিয়ার শৃঙ্খলিত বোলিং আক্রমণে, শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা সংগ্রহ করতে পারে মাত্র ১৩৪ রান, ৮ উইকেট হারিয়ে।
প্রোটিয়াদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছিল খুব তাড়াতাড়িই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে কুইন্টন ডি কক ব্যাট হাতে একেবারে ব্যর্থ—চার বল খেলে করেন মাত্র ১ রান, আউট হন নামিবিয়ার অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাসের বলে। অন্য প্রান্তে রেজা হেনড্রিকসকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি ট্রাম্পেলম্যান, ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন তাকে। পাওয়ারপ্লে শেষে স্কোর তখন ২৫/২, এবং সেখান থেকেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
রুবিন হারম্যান ও লুয়ান্দ্রে প্রিটোরিয়াস চেষ্টা করেছিলেন ইনিংস গুছিয়ে নিতে, কিন্তু দুইজনই দ্রুত বিদায় নিলে দলটা নেমে যায় বিপাকে। ১০.২ ওভার শেষে ৬৪/৪—সেখান থেকে জেসন স্মিথ কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করেন। তবে ট্রাম্পেলম্যানের দুর্দান্ত স্পেলেই শেষ হয়ে যায় তার প্রতিরোধ। ৩০ বলে ৩১ রানই ছিল দলের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। নামিবিয়ার হয়ে ট্রাম্পেলম্যান নেন ৩ উইকেট ২৮ রানে, পাশাপাশি ম্যাক্স হেইঙ্গো ২টি, আর এরাসমাস, বেন শিকোঙ্গো ও জেজে স্মিট প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট।
১৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে কিছুটা চাপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত জয় পায় নামিবিয়া। শেষ বলে যখন স্কোর সমান, তখন আন্দিলে সিমেলানের বলে চার মেরে ইতিহাস গড়েন উইকেটরক্ষক জেন গ্রিন। ২৩ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি, সঙ্গে ছিল দুটি চার ও একটি ছক্কা। অধিনায়ক এরাসমাস করেন ২১, মালান ক্রুগার ১৮ এবং ট্রাম্পেলম্যান অপরাজিত থাকেন ১১ রানে।
পুরো ম্যাচজুড়ে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য রুবেন ট্রাম্পেলম্যানকেই নির্বাচিত করা হয় ম্যাচসেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে নান্দ্রে বার্গার ও সিমেলানে নেন দুটি করে উইকেট, আর জেরাল্ড কোটজি ও বিওর্ন ফোর্টুইন নেন একটি করে। নামিবিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে এই জয় নিঃসন্দেহে মাইলফলক—শুধু প্রতিপক্ষের নামেই নয়, আত্মবিশ্বাসে ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনায়ও।
ইউটি/টিকে