ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত নিরসনে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে বিশ্বনেতারা এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন। ট্রাম্পসহ ২০টিরও বেশি দেশের শীর্ষনেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস কিংবা ইসরায়েল সরকারের কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে থাকছেন না।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার ভিত্তিতে গত শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। আজ এই যুদ্ধবিরতির চতুর্থ দিনে সম্মেলনে বসছেন বিশ্বনেতারা।
ধারণা করা হচ্ছে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ইতোমধ্যে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাক্ষর করতে পারেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্প এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপের একাধিক দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। মিসর সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো গাজায় সংঘাত শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার নতুন এক যুগে প্রবেশ করা।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, মিসরের সম্মেলনে ইসরায়েলের কোনো কর্মকর্তা যোগ দিচ্ছেন না। অন্যদিকে, হামাসের কোনো নেতাও সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন না বলে ফিলিস্তিনি একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির মূল শর্ত অনুযায়ী, হামাস এবং ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মধ্যে বন্দিবিনিময়ে তোড়জোড় শুরু করেছে। গতকাল নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁরা ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত নিতে প্রস্তুত। তার মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান জানান, সোমবার ভোরে হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে। জীবিতদের রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের রেইম সেনাঘাঁটিতে এবং মৃতদেহগুলো ইসরায়েলের পতাকাযুক্ত কফিনে করে ফেরত আনা হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর হামাস প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৪৮ জন এখনো উপত্যকাটিতে রয়েছেন—যার মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ২২ জন শিশু রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ইসরায়েলি সেনা সরে যাওয়ার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধারকাজ চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৪ জনের মরদেহ গাজার হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১১৭টি ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৭ হাজার ৮০৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণের কিছু ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ এলাকায় ফিরলেও ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছু দেখতে না পেয়ে তাদের খুশি মলিন হয়ে যাচ্ছে।
এমআর/টিকে